ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিক্রিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকির সমর্থকদের সঙ্গে। সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
মোদির সফরের দ্বিতীয় ও শেষ দিন শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধানের সফরের দিন হেফাজতের তাণ্ডবের পর পুলিশের গুলিতে প্রাণহানির প্রতিবাদে বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে ভাসানী পরিষদ নামে একটি সংগঠন।
ওই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
তারা চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের তাণ্ডবের বিষয়ে কোনো কথা না বলে পুলিশের বিরুদ্ধে একতরফা হামলার অভিযোগ আনেন।
সভার শেষ দিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাফরুল্লাহ চৌধুরী জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রবেশ করছিলেন। এ সময় পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছে এমন অভিযোগে কয়েকজনকে আটক করা হয়।
প্রেসক্লাবে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য ছিয়াম আহমেদ বলেন, ‘পাঁচজনকে আটক করা হয়ছে।’
তাদের আটক করার পরই পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকালের বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে দুই-তিনজনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আগের দিন ঢাকার বায়তুল মোকাররমে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে তাণ্ডব চালায় হেফাজত কর্মীরা।
হেফাজতের সদর দপ্তরের কাছের মাদ্রাসা থেকে মিছিল বের হয়। কর্মীরা সরকারি ডাকবাংলো, স্থানীয় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে হামলা করে।
সহকারী পুলিশ কমিশনার প্রবীর ফারাবি সরকারি ডাকবাংলোয় থাকতেন। তাকে সেখান থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে পেটানো হয়। সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সরকারি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
এরপর হেফাজত কর্মীরা তেড়ে যায় থানায়। সেখানে পুলিশের ওপর করে হামলা। কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার পর গুলি করতে বাধ্য হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গুলিবিদ্ধ আটজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে চারজনকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসকরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনেও হামলা হয়। সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা ও রেললাইনে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনায় ট্রেন চলাচল কয়েক ঘণ্টা বন্ধ হয়ে যায়। হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালালে একজন নিহত হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় শনিবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় হেফাজত।