চট্টগ্রামে তাণ্ডব চালানোর পর পুলিশের গুলিতে নিহত ও আহতদের প্রতিটি ফোঁটা রক্তের বদলা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তবে এই বদলা বলতে তারা কী বোঝাচ্ছে, সেটি সংগঠনের আমির জুনাইদ বাবুনগরীর বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়নি।
শনিবার সংগঠনের আমিরের এই বিবৃতিতে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের দিন শুক্রবার চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডবে পাঁচ জনের মৃত্যু ও ঢাকায় সংঘর্ষের পর শনিবার বিক্ষোভ ও রোববার সারাদেশে হরতালের ডাক দিয়েছে হেফাজত।
রাজধানীতে হেফাজত কর্মীরা জড়ো হয়ে রাজপথে না নামলেও সংগঠনের সদরদপ্তর হাটহাজারীতে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে তারা। সড়কে ইটের দেয়ালও তুলে দেয়া হয়েছে।
বাবুনগরী তার বিবৃতিতে হরতাল পালন করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের প্রতিবাদ জানিয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। ছবি: নিউজবাংলা
তার দাবি, মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ঢাকা বায়তুল মোকাররম, হাটহাজারী, যাত্রাবাড়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করা হয়েছে। আর নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর পুলিশ গুলি করেছে।
হেফাজত আমির বলেন, ‘কার নির্দেশে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্রদেরকে এভাবে হামলা ও শহিদ করা হলো, এর জবাব প্রশাসনকে অবশ্যই দিতে হবে এবং অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
আগের দিন ঢাকার বায়তুল মোকাররমে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে তাণ্ডব চালায় হেফাজত কর্মীরা।
হেফাজতের সদরদপ্তরের কাছের মাদ্রাসা থেকে মিছিল বের হয়। কর্মীরা সরকারি ডাকবাংলো, স্থানীয় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে হামলা করে।
সহকারী পুলিশ কমিশনার প্রবীর ফারাবি সরকারি ডাকবাংলোয় থাকতেন। তাকে সেখান থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে পেটানো হয়। সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সরকারি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
এরপর হেফাজত কর্মীরা তেড়ে যায় থানায়। সেখানে পুলিশের ওপর করে হামলা। কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার পর গুলি করতে বাধ্য হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গুলিবিদ্ধ আটজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে চার জনকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসকরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশনেও হামলা হয়। সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা ও রেল লাইনে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনায় ট্রেন চলাচল কয়েক ঘণ্টা বন্ধ হয়ে যায়। হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালালে একজন নিহত হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় শনিবার দেশ জুড়ে বিক্ষোভ ও রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় হেফাজত।
‘তৌহিদি জনতার এ আন্দোলন দেশ কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে ছিল না’ উল্লেখ করে বাবুনগরী বলেন, এই আন্দোলন ছিল নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে।
হাটহাজারী মাদ্রাসা এলাকার পরিবেশ থমথমে। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি বলেন, ‘এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে তৌহিদি জনতার উপর পুলিশের এমন বর্বরোচিত হামলা বরদাশত করা যায় না। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হাটহাজারীতে আমার কলিজার টুকরা চারজন ভাইকে শহিদ করা হয়েছে পুলিশ। শহিদদের গা থেকে ঝরা এ রক্ত কভু বৃথা যেতে দেয়া হবে না। পুলিশের গুলিতে নিহত তৌহিদি জনতার প্রতি ফোটা রক্তের বদলা নেয়া হবে।’
‘মোদি ইস্যুতে যদি আর একজন তৌহিদি জনতার রক্ত ঝরে বা ওলামায়ে কেরামকে হামলা মামলা ও হয়রানি করা হয় তাহলে এর প্রতিবাদে পুরো দেশে আন্দোলনের দাবানল জ্বলে উঠবে। প্রয়োজনে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।’
মোদিকে নতিবিলম্বে মোদিকে বাংলাদেশ ছাড়তে হবে বলেও বলা হয় বিবৃতিতে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিক্রিয়ায় বামপন্থি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের সাধারণ ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদ ও হেফাজতসহ কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক বিভিন্ন দল ও সংগঠন প্রতিবাদমুখর।
২৬ মার্চ সফর ঘনিয়ে আসার আগে আসে সংগঠনগুলো সহিংস হয়ে উঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। সফরের আগের দিন মতিঝিলে পুলিশের ওপর হামলা হয়। সেদিন হেফাজত নেতা মামুনুল হক মোদি দেশে এলে সরকার পতনের ক্ষেত্র তৈরির সতর্কতা দেন। এমনকি এক সপ্তাহ আগে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রীক দল ও সংগঠনের বিক্ষোভে এক বক্তা মোদি এলে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন।
পুলিশ এই সফরকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করার কথা বললেও এই হুমকিদাতাদেরকে ধরতে পারেনি।