চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা এমনকি থানায় হামলার পরদিন চট্টগ্রাম-খাগড়াছাড়ি মহাসড়কে ইটের দেয়াল তুলে বিক্ষোভ করছে মাদ্রাসা ছাত্ররা। তাদের অবস্থানের কারণে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
শুক্রবার বিকেল থেকেই ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। শনিবার সকালে হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনের সড়কে অবস্থান নেয় দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা।
বেলা ১১টার দিকে মাদ্রাসার সামনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের মাঝখানে ইটের দেয়াল তৈরি করে রেখেছে তারা। দেয়ালের সঙ্গে কিছু লোহার কলাপসিবল গেটও রাখা হয়েছে।
আগের দিন থানায় ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলার পর পুলিশের গুলিতে চারজনের মৃত্যুর পর প্রশাসন নিরাপত্তা জোরদার করেছে। পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি তল্লাশি দিচ্ছে আধা সামরিক বাহিনী বিজিবিও।
আগের দিন ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদে ধর্মভিত্তিক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সরকার-সমর্থকদের সংঘর্ষের প্রতিক্রিয়ায় জুমার নামাজের পর হেফাজতের সদর দপ্তরের কাছের মাদ্রাসা থেকে মিছিল বের হয়। কর্মীরা সরকারি ডাকবাংলো, স্থানীয় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে হামলা করে।
হাটহাজারী মাদ্রাসা এলাকার পরিবেশ থমথমে। ছবি: নিউজবাংলা
সহকারী পুলিশ কমিশনার প্রবীর ফারাবি সরকারি ডাকবাংলোয় থাকতেন। তাকে সেখান থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে পেটানো হয়। সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সরকারি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
এরপর হেফাজত কর্মীরা তেড়ে যায় থানায়। সেখানে পুলিশের ওপর করে হামলা। কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার পর গুলি করতে বাধ্য হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গুলিবিদ্ধ আটজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
এর প্রতিক্রিয়ায় শনিবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় হেফাজত।
নানা হুমকি দিলেও ঢাকায় হেফাজত কর্মীরা সকালে জড়ো হলেও রাজপথে পরে আর নামেনি। তবে হাটহাজারীর কর্মীরা রাজপথে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকে।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম নামে একজন নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেন। তাদের ছয়টি দাবি আছে বলেও জানান তিনি।
তাদের কর্মীদের খুন করা হয়েছে দাবি করে তিনি এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। বলেন, ‘ছাত্র-জনতার ওপর কোনো ধরনের হামলা করা যাবে না, নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ হাটহাজারী প্রশাসনকে বহন করতে হবে, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার খরচ সরকারকে বহন করতে হবে।’
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলা করা হয়েছে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘অবহেলায় জড়িত চিকিৎসকদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বরখাস্ত এবং ‘ইন্ধনদাতাদের’ গ্রেপ্তারের দাবি আছে বলেও জানান এই হেফাজত নেতা।
বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের প্রতিবাদ জানিয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। ছবি: নিউজবাংলা
নিরাপত্তা জোরদার
আগের দিন হেফাজতের হামলার আগে নিরাপত্তার আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বিশৃঙ্খলার পর স্থানীয় প্রশাসন এদিকে নজর দিয়েছে।
হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে বাস্টস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে পুলিশ ব্যরিকেড দিয়ে রেখেছে। ওই অংশে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
এলাকায় অতিরিক্ত র্যাব, পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে হাটহাজারীতে বিজিবির টহল দেখা গেছে।
ঘটনাস্থলে থাকা হাটহাজারী থানার এসআই কবির উদ্দিন বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’