শেরপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক ছিলেন শহীদ আবু তালেব। বানাতেন বিস্ফোরক ও অস্ত্র। কিন্তু ধরা পড়ে যান যুদ্ধ চলাকালে। নির্মম নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করা হয় স্বাধীনতাকামী মানুষটিকে।
আবু তালেবের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম আছে গেজেটে। কিন্তু তার পরিবারের যেসব সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল, পাচ্ছেন না তারা। তবুও পরিবারটি আশায় বুক বেঁধে আছে, একদিন মিলবে প্রাপ্য সম্মান।
জেলার তৎকালীন নবীনচরের আবু তালেব চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে পালিয়ে এসে এলাকায় শুরু করেন কামারের কাজ। তৈরি করতেন অস্ত্র। এসব অস্ত্র দিয়েই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতেন তিনি।
শহীদ আবু তালেবের ছেলে ইদ্রিস আলীর জীবন চলে মানুষের মরদেহ বহন করে। বার্ধক্যের কারণে শরীর দুর্বল হওয়ায় এখন মরদেহ বহন করতেও কষ্ট হয়। কষ্টের মধ্যেও আক্ষেপ, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা হলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তারা পাননি কোনো সরকারি সুবিধা।
শহীদ আবু তালেবের বড় ছেলে ইদ্রিস আলী
তিনি জানান, বাবার মৃত্যুর পর থেকেই তাদের পরিবারে নেমে আসে কষ্ট। দুই ভাই আর দুই বোনকে নিয়ে খুব কষ্টে পড়ে যান তার মা। উপায়ন্তর না দেখে তিনি বড় ছেলে হিসেবে আয়ের জন্য থানায় মরদেহ টানার কাজ শুরু করেন। বয়সের কারণে এখন মরদেহও টানতে পারেন না। জায়গা-জমি না থাকায় তাদের থাকার জায়গারও সমস্যা। তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ের সব প্রমাণপত্র আছে তাদের কাছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দুলাল হাজী জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তালেব এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের রাইফেল চালানো, গ্রেনেড ছোড়া ও আত্মরক্ষার কৌশল শেখাতে প্রশিক্ষণ দিতেন। হঠাৎ একদিন ভোরে আবু তালেবকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী। নির্যাতনের পর কাঁটখালী ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে এই যোদ্ধাকে।
তিনি আরও জানান, শহীদ আবু তালেবের নাম মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটেও রয়েছে। শেরপুর সদর উপজেলার মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকাতেও তিন নম্বরে পাওয়া যায় তার নাম।
এলাকার প্রবীন শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, দারিদ্র্যের কারণে আবু তালেবের ভূমিহীন পরিবারটির জোটে না তিনবেলা খাবার। নবীনগর চার রাস্তার মোড়ে সরকারি খরচে শহীদ আবু তালেব স্মৃতিস্তম্ভ ও শহীদ আবু তালেব পাঠাগার তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তার পরিবার কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় হতাশ এলাকাবাসী। তারা চান, পুনর্বাসন করা হোক শহীদ আবু তালেবের পরিবারের সদস্যদের।
শেরপুর জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল ইসলাম হিরো বলেন, ‘তাকে আমরা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা। দ্রুত সময়ের মধ্যে শহীদ আবু তালেবের মুক্তিযুদ্ধের প্রমাণের সব কাগজ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’
এ বিষয়ে শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন বলেন, ‘এত বছর পরও এরকম একজন বীরের পরিবার কেনো কোনো সুবিধা পায়নি, তা আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হবে।’