বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ এবং হাটহাজারী থানায় হামলার পর পুলিশের গুলিতে চার জন ছাত্র নিহতের জেরে যাত্রাবাড়ীতে সড়ক অবরোধ করা মাদ্রাসাছাত্রদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার সন্ধ্যার পর তাদেরকে অবস্থান থেকে সরানোর চেষ্টায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও হয়েছে। এতে দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়। এদের তিনজন পুলিশ সদস্য। রাত ১০টার দিকে মাদ্রাসার ভেতর থেকে আহত পাঁচ শিক্ষার্থীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় যাত্রাবাড়ী বড় মাদ্রাসার প্রায় দেড় হাজার ছাত্র। তারা মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারেও টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়।
তাদের অবস্থানের খবর পেয়ে পুলিশ নিরাপত্তা বাড়ায়। সেখানে উপস্থিত হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও।
যাত্রাবাড়ীতে ফ্লাইওভারের ওপর আগুন ধরিয়ে দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছেন অবরোধকারী মাদ্রাসাছাত্ররা
মাদ্রাসাছাত্ররা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতার পাশাপাশি দুপুরের পর বায়তুল মোকাররম এলাকায় সরকার সমর্থকদের সঙ্গে কওমিপন্থিদের সংঘর্ষ এবং হাটহাজারীতে পুলিশের গুলিতে চার হেফাজত কর্মী নিহতের ঘটনায় নানা স্লোগান দিচ্ছিল।
প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে যাওয়ার পর সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তাদের ধাওয়া দেয়। এতে সংঘর্ষ বাধে, যা থেমে থেমে চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।
এক পর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে বিক্ষোভকারীদেরকে মাদ্রাসায় ঢুকিয়ে দেয়। পরে মাদ্রাসার আশপাশের এলাকাতেও অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাদ্রাসার কোনো শিক্ষার্থীকে বাইরে পেলে তাকে মাদ্রাসায় ঢুকিয়ে দেয়।
রাত সোয়া ১০টার দিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারি জোনের উপপুলিশ কমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘বিক্ষোভের সময় আমাদের তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে উঠিয়ে নেয়া হয়। তাদের মারধর করায় গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধারে অন্য টিম যাওয়ার পর তাদের ওপরও চড়াও হয় মাদ্রাসাছাত্ররা।
‘সেখানেও অন্তত চারজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। তখন বাধ্য হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে হয়েছে।’
ছাত্রদের অবস্থানের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়
শাহ ইফতেখার আহমেদ জানান, এরপর প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে মাদ্রাসার ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। তারা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় ২০ জনের বেশি আহত হন।
তিনি বলেন, ‘এখন আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার পর তারা দায়িত্ব নিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসা থেকে বের হবেন না। এই ঘটনাটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ ধরনের ঘটনা আশা করিনি।’
মাদ্রাসাছাত্ররা কোন দাবিতে মাঠে নেমেছিল এমন প্রশ্নে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের কাছে মূলত একটি গুজব ছিল যে বায়তুল মোকাররম ও চট্টগ্রামে শত শত মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে হামলা করে আহত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মোদিবিরোধী বিক্ষোভ যুক্ত হয়েছে।’
আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। আমরা ঘটনা তদন্ত করে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেব।’
যাত্রাবাড়ী বড় মাদ্রাসার সামনে রাতভর পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলেও জানান তিনি।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করছে কয়েকটি সংগঠন। এর মধ্যে আছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
শুক্রবার মোদি ঢাকায় আসার পর বায়তুল মোকাররম এলাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় মোদিবিরোধীদের।
কিছুক্ষণের মধ্যে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতের সদরদপ্তর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে মিছিল বের করেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা।
তারা মসজিদ থেকে আনুমানিক ৫০০ গজ দূরে হাটহাজারী থানায় হামলা করেন। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। তাতেও কাজ না হওয়ায় পরে রাবার বুলেট ও বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে চার হেফাজত কর্মী নিহত হন।