চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় হামলার পর পুলিশের গুলিতে চার কর্মী নিহতের জেরে দুই দিনের কর্মসূচি দিয়েছে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। এর মধ্যে শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ আর পর দিন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করার কথা জানানো হয়েছে।
শুক্রবার রাতে পুরানা পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সিনিয়র নায়েবে আমির আব্দুর রব ইউসূফী জানান, হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরীর পক্ষ থেকে ঘোষিত এই কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়েছে সমমনা ধর্মভিত্তিক দলগুলো।
হেফাজত মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধী ছিল। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই সফরের প্রতিবাদে রাজপথে কোনো কর্মসূচি থাকবে না বলেও নিশ্চিত করেছিল তারা।
তবে মোদি ঢাকায় আসার পর বায়তুল মোকাররম এলাকায় তার সফরবিরোধীদের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ব্যাপক বিক্ষোভ করে তারা।
মোদি বিরোধী বক্তব্যের পর বায়তুল মোকাররম থেকে শুরু হয় সংঘর্ষ। ছবি: সাইফুল ইসলাম
সংগঠনের সদরদপ্তর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে জুমার নামাজের পর মিছিল নিয়ে গিয়ে সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ের পাশাপাশি হামলা হয় হাটহাজারী থানায়।
এ সময় পুলিশ প্রতিহত করলে গুলি করলে বেঁধে যায় সংঘর্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। আর তখন পিছু হটে হেফাজত কর্মীরা।
ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ আট জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা চার জনকে মৃত ঘোষণা করেন।
বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের প্রতিবাদ জানিয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। ছবি: নিউজবাংলা
এক জনের প্রাণহানি হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে হামলা করে বিভিন্ন জিনিসপত্রে আগুন দেয়া হয়। আগুন দেয়া হয় রেল লাইনেও। পরে হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় হেফাজত কর্মীদের। আর এতে এক যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্থানীয় হাসপাতাল।
মাদ্রাসা ছাত্ররা রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতেও সড়ক অবরোধ করে সংঘর্ষে জড়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে। তবে দুই ঘণ্টার মধ্যে সেখান থেকে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
এসব হামলার কিছু উল্লেখ না করে হেফাজতের নায়েব আমির অভিযোগ করছেন পুলিশের বিরুদ্ধে।
বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের সময় মোটারসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়। ছবি: সাইফুল ইসলাম
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সারা দেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগমনের প্রতিবাদে ঘৃণা দিবস ছিল। তবে ঢাকায় আমাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না।
‘রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিরা জমায়েত হয়ে মিছিল বের করেছে। এ মিছিলের ওপর পুলিশ ও সরকারী বাহিনী হামলা করে অনেককে আহত এবং গ্রেপ্তার করেছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে চার জন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক জন মারা গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হবে।’
এ সময় হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবির কথাও জানান আব্দুর রব ইউসূফী।
তিনি বলেন, ‘দাবিগুলো হলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে ফেরত পাঠানো, যারা আমাদের ওপর আক্রমণ করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা ও আহতদের চিকিৎসাসহ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেল স্টেশন পুড়িয়ে দেয় হামলাকারীরা। ছবি: নিউজবাংলা
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাওলানা জুনাইদ আল হাবীব, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মনির হোসেন কাসেমী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আতাউল্লাহ আমীনসহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা।
মামুনুল হক বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই দিনে পুলিশ ও সরকারি দলের সন্ত্রাসী বাহিনী যেভাবে মুসল্লিদের ওপর হামলা করেছে, তাতে স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাসে এটি একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।’
হেফাজত কর্মীদের হামলার বিষয়ে মামুনুলও কিছু বলেননি।