বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনে উপস্থিত থাকতে না পেরে আক্ষেপ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে শুভেচ্ছা জানান তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধান। জানান, এই আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানোর পরও করোনা পরিস্থিতির কারণে যোগ দেননি।
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান চলাকালে এরদোয়ানের এই রেকর্ডেড ভিডিও বার্তা চালানো হয়। সে সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে এরদোয়ানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ঢাকা। তিনি আসবেন, এটা নিশ্চিত করেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত, ঢাকা সফর করে যাওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। তবে শেষ পর্যন্ত তার আর আসা হয়নি।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘গত বছরের নভেম্বরেই আমি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এটা (করোনা) কমবে। কিন্তু তা কমেনি।’
করোনা কমলে বাংলাদেশ সফরের জন্য উদ্বেল হয়ে আছেন বলেও জানান এরদোয়ান।
গত বছরের মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গত ডিসেম্বর থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে। তবে গত তিন সপ্তাহ ধরে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী।
আসতে না পারলেও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এরদোয়ান। বলেন, ‘আমি জানি, আমাদের মধ্যে যথেষ্ট সুযোগ আছে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে থাকা সম্পর্ককে আরও নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার। দুই দেশের জনগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্বমূলক অনুভূতি আমাদের সম্পর্ককে আরও উন্নত করার জন্য ইচ্ছাশক্তিকে দৃঢ় করবে।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় তুরস্কের অবস্থান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। তারা পাকিস্তানকে অস্ত্র সহায়তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির পক্ষে কাজ করেছে। বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারেও দেশটির অবস্থান ছিল আপত্তিকর।
মানবতাবিরোধী অপরাধী মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের পর এরদোয়ানের বিরূপ মন্তব্যে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে নামে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছে তুরস্ক। করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সহায়তার পাশাপাশি গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরি করে দেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে।
তুরস্ক এগিয়ে আসার পর বাংলাদেশও হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানান এরদোয়ান। বলেন, ‘আঙ্কারায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট ভবন উদ্বোধন করতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে মোমেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের আমন্ত্রণপত্র আমাকে পৌঁছে দেন।
‘কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ায় আমার এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। যদি পরিস্থিতি ভালো হয়, বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা আমার আছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে এরদোয়ান বলেন, ‘আপনার পিতা, বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান জাতির জন্য সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে আমাদের সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরও গভীর হবে।’