বায়তুল মোকাররম মসজিদে অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষে জড়ানো ধর্মভিত্তিক দলের নেতা-কর্মীরা উগ্র-জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র চায় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর সাড়ে চার ঘণ্টার সংঘর্ষ শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হন ডিএমপির মতিঝিল অঞ্চলের উপকমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বায়তুল মোকাররম মসজিদে অবস্থানকারী বিক্ষোভকারীরা দেশের মর্যাদা চান না। তারা চান, তালেবানি রাষ্ট্র।’
এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন, এটি আমাদের জন্য মর্যাদার। সেই মর্যাদাকে নষ্ট করতে তারা (বিক্ষোভকারীরা) এই সংঘর্ষ করেছে। সত্যিকার অর্থেই তারা রাষ্ট্রের মযার্দা চায় কি না, এ বিষয়ে আমার মনে সন্দেহ আছে। বাংলাদেশ একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হতে চলছে, এটা তারা চায় না। তারা চায় ভিন্ন কিছু। তারা চায় তালেবান ধরনের একটি রাষ্ট্র।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সরকার। বামপন্থিদের পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন তার দেশে আসার বিরোধিতা করছে।
সফরের এক সপ্তাহ আগে গত শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে ধর্মভিত্তিক দলের বিক্ষোভ শেষে এক বক্তা বলেন, মোদি ঢাকায় এলে তারা সন্ত্রাসী হবেন। তালেবান হয়ে বাংলাদেশকে আফগানিস্তানে পরিণত করবেন।
ওই যুবক কে সেটি এখনও জানা যায়নি। তার খোঁজে আছে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা।
ওই বক্তব্যের পর বিক্ষোভ দেখানো ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠন সেই যুবকের বক্তব্যের দায় নিচ্ছে না।
মোদি ঢাকায় আসার পর যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আনুষ্ঠানিকতা শুরুর অপেক্ষা, তখন বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছিল ধর্মভিত্তিক দলের নেতা-কর্মীরা।
সেখানে ছিলেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা। তাদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়ান মোদির সফরবিরোধীরা।
সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা সংঘর্ষ থামাতে গুলি করেছে। পাশাপাশি দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে শান্ত করার চেষ্টা করে।
উপকমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমন্ত্রিত অতিথি। কাজেই বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে আমাদের নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল।
‘ভেতরে (মসজিদের) যখন মুসল্লিরা নামাজ পড়ছিলেন তখন কিছু মুসল্লি বাইরে এসে মিছিল করেন। তারা জুতা-স্যান্ডেল দেখাচ্ছিলেন। এতে অন্য মুসল্লিরা বাধা দিলে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে যারা জুতা স্যান্ডেল দেখাচ্ছিলেন তারা মসজিদের ভেতরে অবস্থান নেন এবং ভেতর থেকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। অন্যান্য মুসল্লি ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন। এমনকি পুলিশের ওপরও চড়াও হন তারা।
‘পুলিশ আইনের মধ্যে থেকে তাদের প্রতিরোধ করার জন্য রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ইত্যাদি ছুড়ে।’
দিনটিকে ঘিরে পুলিশের যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকলেও সংঘর্ষ কেন এড়ানো যায়নি এমন প্রশ্নের জবাবে মতিঝিলের ডিসি বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা মসজিদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। আমরা পবিত্রতা রক্ষার্থে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করিনি।
‘না হলে যে গুটিকয় বিক্ষোভকারী মসজিদের ভেতর থেকে এবং ছাদ থেকে ইটপাটকেল ছুড়ছিলেন, তাদের আমরা সহজেই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারতাম। আজকে কয়েক ট্রাক ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে। মসজিদের ভেতরে এতো ইট কীভাবে এল সেটা তদন্ত করে দেখা হবে।’
পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ করতে মাঠে নামে। তারা এটা কীভাবে করল এমন প্রশ্নের জবাবে মতিঝিল ডিসি বলেন, ‘একদল মুসল্লি মসজিদের ভেতর থেকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন। জুতা, ঝাড়ু দেখাচ্ছিলেন। তাদের এমন তৎপরতার বিরোধিতা করছিলেন আরেকদল মুসল্লি। তারপরই সংঘর্ষ শুরু হয়। যারা জুতা দেখিয়েছেন তারা মসজিদের ভেতরে অবস্থান নেন।
‘মসজিদের ভিতরে অবস্থানকারীদের আমরা বের হয়ে যেতে বলেছিলাম। কেউ কেউ বের হয়ে গেছেন। তবে অতিউৎসাহী কিছু লোক এখনও মসজিদের ভেতরে অবস্থান করছেন।’