রাজশাহীর কাটাখালীতে বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ১৭ জনের মৃত্যু গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, বিস্ফোরিত সিলিন্ডারটি মাইক্রোবাসের।
শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে কাটাখালীর কাপাশিয়া এলাকায় এই দুর্ঘটনার সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লেগুনাও পুড়েছে।
নিহত সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী। এদের মধ্যে ১১ জনের মরদেহ মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও ছয় জন মারা যান। আহত চারজন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
নিহত ১৭ জনের বাড়িই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায়। তারা একসঙ্গে মাইক্রোবাসে রাজশাহী আসছিলেন।
নিহতরা হলেন-পীরগঞ্জের দাড়িতপাড়ার আফছার আলীর ছেলে মোখলেছার রহমান, তার স্ত্রী পারভীন, ছেলে পাভেল, বড় মজিদপুর এলাকার মৃত জোনাব আলীর ছেলে ফুলু মিয়া, তার স্ত্রী নাজমা বেগম, মেয়ে সাবিয়া, সুমাইয়া ও ছেলে ফয়সাল। চৈত্রকোল রাঙ্গামাটি এলাকার ইয়াসিন আলীর ছেলে সালাউদ্দিন, তার স্ত্রী সামছুন্নাহার, ছেলে সাজিদ ও মেয়ে সাফা, প্রজাপাড়ার মৃত সামছুল বাদশার ছেলে তাজুল করিম ভুট্টু, তার স্ত্রী মুক্তা বেগম, ছেলে ইয়াসিন, বড় রাজারামপুর এলাকার মৃত শাজাহান আলীর স্ত্রী কামরুন্নাহার এবং দুরা মিঠিপুর এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে শহিদুর ইসলাম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, রাজশাহী থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাস ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। একই সময় মাইক্রোবাসটি রাজশাহীর দিকে আসছিল। এ সময় কাটাখালীর কাপাশিয়া এলাকায় দুটি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাসটি রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে থেমে যায়।
মাইক্রোবাসটির সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে সেটিতে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ারসার্ভিসের কর্মীরা ছুটে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর জ্বলছে মাইক্রোবাসটি। ছবি: নিউজবাংলাফায়ারসার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহীর সদর স্টেশনের সিনিয়র অফিসার আব্দুর রউফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাসের ধাক্কা লাগার পর মাইক্রোবাসের সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। এতে ভেতরেই কয়েকজন মারা যান।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘটনার মুহূর্তে একটি বাঁশভর্তি ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান ও এক কিশোর সাইকেল চালিয়ে শহরের অভিমুখে আসছিল। একই অভিমুখে দ্রুত গতিতে মাইক্রোবাসটিও আসছিল।
বিপরীত দিক থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাস যাচ্ছিল ঢাকার দিকে। মাইক্রোবাসটি ওই বাঁশের ভ্যানটিকে ওভারটেক করার মুহূর্তে মাঝে ঢুকে পড়ে বাসটি; মাইক্রোবাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিক্তি উপ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর শুনে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে মাইক্রোবাসের ভেতরে থাকা ১১ যাত্রী পুড়ে মারা যান।’
তিনি জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় ১০ জনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে যাওয়ার পর আরও ৬ যাত্রী মারা যায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৪ জন।
চিকিৎসাধীন তিনজন বাসের এবং একজন মাইক্রোবাসের যাত্রী বলে জানা গেছে।
ঘটনার পর রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে যানবাহ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসটি সরানো হলে প্রায় দুই ঘণ্টা পর এই সড়কে আবারও বাস চলাচল শুরু হয়।