বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের আত্মত্যাগ ভুলবার নয়: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ২৬ মার্চ, ২০২১ ১৮:৩২

‘১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের অত্যাচারের মুখে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রায় ১ কোটি শরণার্থীকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, গোলাবারুদ দিয়ে সাহায্য করেছিল। …বাংলাদেশ-ভারত মিত্র বাহিনীর যৌথ অভিযানের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এই যুদ্ধে ভারতের এক উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সৈন্য শহীদ হয়েছেন। আমি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা তুলে ধরে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে দেশটি যে ভূমিকা রেখেছে, সেটি কখনও ভুলে যাওয়ার মতো নয়।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।

শুক্রবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছেন মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদি।

জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের এই অনুষ্ঠান শুরু হয় সমবেত কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’র মধ্য দিয়ে।

এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ফুটিয়ে তোলা হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। কৃতজ্ঞতা জানান ভারতের জনগণের প্রতি। বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণের যে আত্মত্যাগ, সাহায্য-সহযোগিতা তা কখনও ভুলবার নয়। আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে সে অবদানের কথা স্মরণ করি।’

৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালে ভারত যা করেছে, সেটি ইতিহাসে বিরল। নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে পাকিস্তানি রসদ সরবরাহে বাধার পাশাপাশি তারা আশ্রয় দিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, গোলাবারুদ সরবরাহ, বিদেশে পাকিস্তানিদের অপপ্রচার রোধের পাশাপাশি গণহত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞ তুলে ধরা, ১ কোটি শরণার্থীকে আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসাও দিয়েছে তারা।

৫ ডিসেম্বরের পর ভারতীয় সেনাবাহিনীও অংশ নেয় যুদ্ধে। গঠিত হয় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী। আর ১১ দিনের যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর এই যৌথ বাহিনীর কাছেই আত্মসমর্পণ করে জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজীর পাকিস্তানি ইস্টার্ন কমান্ড।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের অত্যাচারের মুখে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রায় ১ কোটি শরণার্থীকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, গোলাবারুদ দিয়ে সাহায্য করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত মিত্র বাহিনীর যৌথ অভিযানের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এই যুদ্ধে ভারতের এক উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সৈন্য শহীদ হয়েছেন। আমি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।’

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে স্বাধীনতা সম্মাননা, সাবেক রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়িকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননাসহ ২২৫ জন ভারতীয় নাগরিককে আমরা মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায় ভূষিত করেছি। এই অনুষ্ঠানে সে কথাও তুলে ধরেন জাতির পিতার কন্যা।

৭৫-এর পর আশ্রয় দেয়ায় ধন্যবাদ

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ছয় বছর ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন শেখ হাসিনা। এই অনুষ্ঠানে সেই স্মৃতিও তুলে ধরেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ভারতের জনগণ এবং সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার পিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমরা দুই বোন জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যাই।

‘আমাদের দেশে ফিরতে বাধা দিলে আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ি। আমার পরিবার এবং আমার ছোট বোন শেখ রেহানাকে ভারত সরকার আশ্রয় দেয়।’

স্থিতিশীল দক্ষিণ এশিয়া গড়তে ভারতের অগ্রণী ভূমিকার প্রত্যাশা

অনুষ্ঠানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এই সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়াকে একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী ছিলেন। বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি তিনি স্বপ্ন দেখতেন অর্থনৈতিক মুক্তির। এ জন্য পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা এবং সমতার ভিত্তিতে সহযোগিতার উপর তিনি জোর দিতেন।’

ভারতের সঙ্গে বর্তমানে আমাদের সম্পর্ক ‘নতুন উচ্চতায়’ উন্নীত হয়েছে বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদিজির ‘‘প্রতিবেশী সর্বাগ্রে’' নীতির প্রশংসা করি। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের টিকা পাঠানোর মাধ্যমে মোদিজির এই নীতিরই প্রতিফলন ঘটেছে।

‘বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ব্যবসায়-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত আমাদের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার।

‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি ফেনী নদীর উপর মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। এই রাজ্যগুলো এখন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে।'

দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারতের ভূমিকা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ভারত এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ দেশ। একটি স্থিতিশীল এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে হলে ভারতকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

‘আমরা যদি পরস্পরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি, তাহলে আমাদের জনগণের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই শুভ মুহূর্তে আসুন প্রতিজ্ঞা করি সকল ভেদাভেদ ভুলে আমরা আমাদের জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করব। দক্ষিণ এশিয়াকে উন্নত-সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব।’

এ সময় বঙ্গবন্ধুকে ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার ২০২০’-এ ভূষিত করায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করার মাধ্যমে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একজন যোগ্য নেতা এবং গান্ধীজির প্রকৃত অনুসারীকেই সম্মানিত করল।’

মুক্তিযুদ্ধের মতো সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনেও দুই দেশ একসঙ্গে বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়েছে। এই বিষয়টিও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উপমহাদেশের দুই বরণীয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে ভারত সরকার বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিয়েছে। আমি এ জন্য ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

মোদির ঢাকা সফরে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেয়ায় ভারতের জনগণকেও ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।

এ বিভাগের আরো খবর