দেশ ও জনগণের উন্নয়ন শুধু রাজনৈতিক নেতাদের একক দায়িত্ব নয়, বরং এটি দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে শুক্রবার বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ১০ দিনের আয়োজনের শেষ দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
বিকাল সাড়ে ৪টায় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদি অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশ ও জনগণের উন্নয়ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের একক দায়িত্ব নয়। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।’
‘স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না’ জানিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘অধিকারকে অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলেই স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে ওঠে। আবার অধিকারের অপপ্রয়োগ স্বাধীনতাকে খর্ব করে।’
১৯৭১ সালে এই দিনের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এই স্বাধীনতা এক দিনে বা হঠাৎ করে আসেনি। অনেক ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বঙ্গের বন্ধু হয়েই থাকেননি, হয়ে উঠেছেন বিশ্ববন্ধু। সারা বিশ্বের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের আপনজন।’
মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন ও সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সকলকে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিটি কাজে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সকল ক্ষেত্রে নীতিনৈতিকতা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।’
দেশের এই বর্ণাঢ্য আয়োজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যোগ দেয়ায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের এবং বিশ্বস্ত বন্ধু। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি ভারত যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তা আমি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘গান্ধী শান্তি’ পুরস্কারে ভূষিত করায় ভারত সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি ভারতের বন্ধুভাবাপন্ন জনগণের শান্তি, মঙ্গল ও উন্নতি কামনা করি।’
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকর ও সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। আমি আশা করি অচিরেই অন্যান্য অমীমাংসিত ইস্যুরও সুষ্ঠু ও মর্যাদাপূর্ণ নিষ্পত্তি হবে।’
এ সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বমানবতার ইতিহাসে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করে।’
‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও ভারতসহ বিশ্ব সম্প্রদায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে’ বলেও আশা রাষ্ট্রপতির।
গৌরব ও ত্যাগের অনুপম বীরত্বগাথা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। আমরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জনকারী জাতি।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সুবর্ণ আলো দেখা যাচ্ছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যাব- মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে এটাই হোক সকলের চাওয়া-পাওয়া।’