চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় হামলা করা হেফাজত কর্মীদের চারজন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত হওয়ার পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তাদের মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
আরও বেশ কয়েজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভুঁইয়া। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কারও নাম জানাতে পারেননি।
তবে হেফাজতের ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী দাবি করেছেন, পুলিশের গুলিতে নিহতদের মধ্যে তিন জন হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র ও এক জন স্থানীয় একটি দোকানের দর্জি। দর্জির পরিচয় নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তার দাবি অনুযায়ী নিহতরা হলেন রবিউল ইসলাম, মো. মেহরাব, মো. আবদুল্লাহ ও মো. জামিল হোসেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের দিন শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকায় বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে মিছিল বের করেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা।
তারা মসজিদ থেকে আনুমানিক ৫০০ গজ দূরে হাটহাজারী থানায় হামলা করেন। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। তাতেও কাজ না হওয়ায় পরে রাবার বুলেট ও বুলেট নিক্ষেপ করে।
হাটহাজারী থানায় হেফাজত কর্মীরা ইট-পাটকেল ছোড়ার পর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ে প্রতিরোধ করে। ছবি: নিউজবাংলা
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, হেফাজত অনুসারীদের পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা চালায়।
একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছুড়তে শুরু করে। প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে।
সংঘর্ষের পর হেফাজতের আহত বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে রিকশাভ্যানে করে নিরাপদে সরিয়ে নিতে দেখা যায়। এদের একজনের শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল।
মোদির সফরের প্রতিক্রিয়ায় হেফাজতের রাজপথে কর্মসূচি না থাকলেও হাটহাজারীতে মিছিল বের হয় বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের প্রতিক্রিয়ায়
হেফাজতের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ হেফাজত কর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছে। আমাদের একাধিক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’
তবে রাত ৮টার দিকে তিনি দাবি করেন, শুক্রবার দুপুরে হাটহাজারীতে মিছিলে হেফাজতে ইসলামের কেউ ছিল না।
নোমান ফয়েজী বলেন, ‘মিছিলটি বের করেছিল হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা। এর সঙ্গে হেফাজতের কোনো সম্পর্ক ছিল না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, দুপুরে জুমার নামাজের সময় থানায় ১০/১৫ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। মূলত এই সুযোগে থানা আক্রমণ করতে আসে ছাত্ররা।
মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদে হেফাজতের রাজপথে কোনো কর্মসূচি ছিল না। গত ২২ মার্চ তারা ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে নিশ্চিত করে যে, কোনো ধরনের সংঘর্ষে যাচ্ছেন না তারা।
তার পরেও হাটহাজারীতে হেফাজতের কর্মীরা সহিংস হয়ে ওঠে ঢাকায় বায়তুল মোকাররমের সংঘর্ষের ঘটনায়।
হাটহাজারীতে হেফাজতের হামলার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন চারজন। ছবি: নিউজবাংলা
জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম থেকে ধর্মভিত্তিক দলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভের চেষ্টা করলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে ৫০ জনেরও বেশি আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।
এই খবর হাটহাজারী পৌঁছার পর উত্তেজিত হয়ে ওঠেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। গত এক দশকে আলোচিত হয়ে ওঠা সংগঠনটির সদরদপ্তর সেখানেই অবস্থিত।