সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে শহীদবেদিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান তিনি।
পরে স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে মন্তব্য লিখে একটি গাছের চারা রোপণ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
তাকে বহনকারী এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বিমানটি শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বেলা ১১টায় বিমান থেকে নামার পর মোদিকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে গার্ড অফ অনার নেন মোদি। পরে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়।
ওই সংবর্ধনার পর শেখ হাসিনা ও মোদি বিমানবন্দরে স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চে ওঠেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অফ অনার দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে উপস্থিত মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে মোদিকে পরিচয় করিয়ে দেন। পরে মোদি তার সফরসঙ্গীদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পরিচয় করান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে মোদির এ সফর। করোনাভাইরাস মহামারির পর এটাই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বিদেশ সফর।
ঢাকায় আসার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে একটি পোস্ট করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ওই পোস্টে বিমানের সিঁড়িতে দেখা যায় তাকে।
এতে মোদি লেখেন, ‘ঢাকা যাচ্ছি। এই সফর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বন্ধুত্ব আরও গভীর করবে।’
দিনের অন্যান্য কর্মসূচি
স্মৃতিসৌধ থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়ালে যাবেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ঘুরে দেখবেন তিনি।
ধানমন্ডি থেকে মিন্টো রোডের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যাবেন মোদি। বিকেলে তিনি যাবেন জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৭টায় তিনি যাবেন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মলেন কেন্দ্রে। রাত সাড়ে ৮টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ফিরবেন তিনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ ভিভিআইপিদের চলাচলের আগে-পরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে শুক্রবার ও শনিবার। এমনকি কিছু কিছু সময়ের জন্য সেসব সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।
দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি
সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে যাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে তিনি হেলিকপ্টারে চড়ে যাবেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী মন্দিরে। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে রওনা দিয়ে ১০টা ১০ মিনিটে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার।
সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে তিনি সাতক্ষীরা থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হবেন। ১০টা ৪৫ মিনিটে সেখানে পৌঁছবেন। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে তিনি বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন। সমাধি প্রাঙ্গণে তিনি বৃক্ষরোপণ করবেন এবং পরিদর্শন বইয়ে সই করবেন।
বেলা সোয়া ১১টায় তিনি টুঙ্গিপাড়া থেকে কাশিয়ানীর ওড়াকান্দির উদ্দেশে রওনা হবেন এবং ১১টা ৩৫ মিনিটে মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মভিটায় পৌঁছাবেন।
বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে মোদি ওড়াকান্দি ছাড়বেন। দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে ফিরে আসবেন। সেখান থেকে দুপুর ১টায় তিনি যাবেন প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে। সেখানে তিনি মধ্যাহ্নভোজের পর বিশ্রাম করবেন।
নরেন্দ্র মোদি বিকেল সোয়া ৩টায় হোটেল সোনারগাঁও থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রী সেখানে তাকে স্বাগত জানাবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল হলে দুই প্রধানমন্ত্রী ৩০ মিনিটের একান্ত বৈঠকে অংশ নেবেন।
এরপর ৪টায় শুরু হবে এক ঘণ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। বিকেল ৫টা থেকে ৫টা ২০ মিনিট পর্যন্ত চলবে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই।
৫টা ২০ মিনিটে নরেন্দ্র মোদি বঙ্গভবনের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রওনা হবেন। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ তাকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানাবেন।
সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিট পর্যন্ত তারা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন। সোয়া ৬টায় নরেন্দ্র মোদি বিমান বন্দরের উদ্দেশে বঙ্গভবন ছাড়বেন। ৬টা ৩৫ মিনিটে বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পর তাকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ৬টা ৪০ মিনিটে মোদিকে বহনকারী বিশেষ বিমান ঢাকা ছাড়বে।