জুমার নামাজের পরপরই বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন মোদিবিরোধী বিক্ষোভকারীরা।
যেকোনো ধরনের সংঘাত এড়াতে জুমার নামাজের আগে থেকেই বায়তুল মোকাররমের চারপাশসহ মতিঝিল ও গুলিস্থান এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
জুমার নামাজের সময় ঘনিয়ে এলে দলে দলে মুসল্লিরা বায়তুল মোকাররম মসজিদে জড়ো হতে থাকেন। তাদের মধ্যে মোদির সফর বিরোধী ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীরা ছিলেন। দুই পক্ষই মসজিদে নামাজ পড়েন।
নামাজের পর দুপুর পৌনে ২টার দিকে মসজিদের ভেতরেই জুতা হাতে নিয়ে মোদির সফর বিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করেন ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দিলে তাদের ধাওয়া দেন তারা। এক পর্যায়ে সরকার সমর্থকরা মসজিদ থেকে বের হয়ে আসেন।
মিনিট দশেক পরে সরকার সমর্থকরা মিছিল করতে থাকেন মসজিদের উত্তর গেটের সামনের সড়কে। এ সময় তাদের ওপর ইট-পাটকেল ছুড়ে মারা হয় মসজিদের ভেতর থেকে।
ইট ছুড়ে মারা এক তরুণেকে ধরে নিয়ে আসার সময় মোদির সফর বিরোধীরা সরকার সমর্থকদের ওপর হামলা করে। পরে সরকার সমর্থকরা সুসংগঠিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিলে তারা মসজিদের ভেতরে অবস্থান নেন। আর সরকার সমর্থকরা মসজিদের উত্তর গেটে অবস্থান নিয়ে ভেতরে থাকা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে।
তখন বাইরে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এসে আরও উত্তপ্ত হতে থাকে।
এরপর বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ মসজিদ ও মার্কেটের ছাদে অবস্থান নেন। সেখান থেকে তারা পুলিশ এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকেন।
এর মাঝেই বিক্ষোভকারীদের একাংশ মসজিদের বাইরে এসে উত্তর গেটে দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর মধ্যে একটি মোটরসাইকেল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সদস্য মো. সেলিমের নিশ্চিত হয়েছে নিউজবাংলা।
বিকেল সোয়া চারটার দিকে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের গাড়ি বহর মতিঝিল হয়ে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার সময় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। খানিক পর আবারও শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এদিন বেলা ১১টায় বাংলাদেশে দুই দিনের সফরে আসেন নরেন্দ্র মোদি। তার এই সফর ঠেকাতে আগে থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছিল ইসলামপন্থি কয়েকটি দল। একই দাবিতে নানা কর্মসূচি দিয়ে আসছিল ছাত্র অধিকার পরিষদসহ কয়েকটি বাম সংগঠনও।
মোদির সফর প্রতিহত করতে গত জুমার নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভ করে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রীক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ বলেছিল- ‘যদি মোদিকে আসতে দেয়া হয়, তাহলে আমরা সবাই সন্ত্রাসে পরিণত হব। বাংলা হবে আফগান, আমরা হব তালেবান।’