বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীদের ওপর আবার হামলার অভিযোগ উঠেছে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
তবে ছাত্রলীগ দাবি করছে উল্টো কথা। তাদের দাবি, হামলা হয়েছে তাদের ওপর। আর তারা তা প্রতিহত করেছে।
হামলায় প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফ্রন্ট নেতা সালমান সিদ্দিকী।
সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আসিফ হাওলাদারও আহত হয়েছেন। তাকেসহ অন্যদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ফেরার পথে ভিসি চত্বরে তাদের ওপর হামলা হয়।
এ প্রতিবেদন লেখার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হেলমেট পরে হাতে লাঠি নিয়ে টিএসসির সামনে অবস্থান নিয়ে ছিল।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ছাত্র ফ্রন্ট নেতা সালমান সিদ্দিকি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিছিল শেষে আমরা ফিরে আসছিলাম। পেছন থেকে মহানগর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে। আমরা পালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টারে অবস্থান নিলেও গেইট ভেঙে সেখানে প্রবেশ করে আমাদের উপর ফের হামলা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ কোয়ার্টারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে আটকে আছে। ছাত্রলীগের অবস্থানের কারণে তারা বের হতে পারছে না।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘বামের নেতারা আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল ফুলার রোড থেকে মোমবাতি জ্বালিয়ে জগন্নাথ হলে যাওয়া ৷ আমরা ভিসি চত্বর এসে দেখি বামের নেতাকর্মীরা ফুলার রোডে লাঠি নিয়ে অবস্থান করছে।
‘এ সময় তারা আমাদের উদ্দেশ্য করে উত্তেজক স্লোগান দিয়ে আমাদের দিকে পাথর নিক্ষেপ করছে। এক পর্যায়ে তারা তাদের হাতে থাকা লাঠি নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসলে আমরা তাদের প্রতিহত করি।’
প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আসিফ হাওলাদার বলেন, ‘আমি ফুলার রোডে ছাত্রলীগ এবং বামদের ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করছিলাম। এ সময় পেছন থেকে আমার ওপর হামলা করা হয়েছে। হামলায় আমার মাথা ফেটে গেছে। বর্তমানে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি আছি।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, ‘ছাত্রলীগের অতর্কিত হামলায় আমাদের ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আমরা দোষীদের বিচার চাই।’
ক্যাম্পাসে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কী ভূমিকা জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর আব্দুর রহীম বলেন, ‘আমাদের অনেকেই বর্তমানে কোভিডে আক্রান্ত। তারপরও আমরা ঘটনার প্রতিটি আপডেট নিয়েছি৷ প্রক্টরিয়াল টিমকেও বলেছি অপ্রীতিকর কোন ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে।’
তিনি বলেন, ‘এখন ক্যাম্পাস বন্ধ। বন্ধ ক্যাম্পাসে এত বড় প্রোগ্রাম হলে চার পাঁচ জন প্রক্টরকে কী আর খুঁজে পাওয়া যায়? আমরা উভয় পক্ষকে সহনশীল আচরণের অনুরোধ করছি।’
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কারা এর সঙ্গে জড়িত আমরা এখনো জানতে পারিনি। খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
গত মঙ্গলবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাতেও নাম এসেছে ছাত্রলীগের।
মশাল মিছিল
নরেন্দ্র মোদিকে ‘গুজরাটের গণহত্যাকারী’ এবং ‘ফ্যাসিস্ট’ দাবি করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তার বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো।
মিছিলটি টিএসসি থেকে শুরু হয়ে শেখ রাসেল ভবন, এসএম হল, পলাশি হয়ে নীলক্ষেত মোড় ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনে অবস্থান নেয়।
সন্ধ্যায় টিএসসিতে আগে থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিলে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের ফলে সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
তবে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের কর্মসূচি শেষ ঘোষণা করে। সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি ।