বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় খন্দকার মোশতাকের নামও

  •    
  • ২৫ মার্চ, ২০২১ ২১:৩৭

তালিকা প্রকাশের সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী থাকায় মোশতাকের নাম এই তালিকায় এসেছে।

যার বিশ্বাসঘাতকতায় পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রাণ দিতে হয়েছিল, সেই খন্দকার মোশতাক আহমেদের নামও এসেছে সরকার ঘোষিত মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকায়।

বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকার প্রথম ধাপের নাম প্রকাশ করা হয়। এই তালিকায় রয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৭ জনের নাম।

তালিকা প্রকাশের সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী থাকায় মোশতাকের নাম এই তালিকায় এসেছে।

ঘাতক মোশতাকের নাম রাখার ব্যাখ্যায় মন্ত্রী বলেন, ‘খন্দকার মোশতাক, তিনি মন্ত্রী হিসেবে মুজিবনগর সরকারে ছিলেন নিঃসন্দেহে। এটাও সত্যি যে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি এ ঘটনায় বেনিফিসিয়ারি।

‘ধরেন স্বাভাবিক নিয়মে বঙ্গবন্ধু তো মারাও যেতে পারতেন। তাহলে কে হবে রাষ্ট্রপ্রধান। ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন। অথবা পার্লামেন্টের মেম্বাররা তাকে ইলেক্ট করবেন। তিনি তো অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছেন।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘মহামান্য আদালত এরই মধ্যে ঘোষণা করেছে তাদের ক্ষমতা কার্যক্রম অবৈধ। এ জন্য তার নামের পাশে লেখা থাকবে তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনি হিসেবে অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে চার্জশিটও হয়েছে কিন্তু বিচার হয়নি। কারণ তার আগেই তিনি মারা যান।

‘আর দেশের আইনে মৃত মানুষের বিচার হয় না। সেজন্য হয়তো সাজা পাননি। তার নাম থাকবে সঙ্গে তার কর্মও থাকবে।’

১৯১৯ সালে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির দশপাড়া গ্রামে জন্ম নেয়া মোশতাক ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজনদের অন্যতম। ছাত্ররাজনীতিতেও ছিল তার বিচরণ। ছিলেন মুসলিম লীগের ছাত্র শাখার নেতৃত্বেও। পাকিস্তান গঠনের পর মুসলিম লীগের প্রগতিশীল একটি অংশ আলাদা হয়ে গঠিত হয় আওয়ামী লীগ। সেই সময় তরুণ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন মোশতাক। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন।

১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন মোশতাক। দুই বছর পর যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দেয়া হলে কারাবরণও করেন তিনি। ১৯৫৫ সালে হন যুক্তফ্রন্টের চিফ হুইপ। পরে সামরিক শাসন জারি হলে গ্রেপ্তার হন। এভাবেই বঙ্গবন্ধুর কাছে আসেন মোশতাক।

ছয় দফা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই বন্দি করা হয় মোশতাককে। ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী ‘গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হলে এতে পশ্চিম পাকিস্তান অংশের সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের হয়ে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে গঠিত হয় প্রবাসী সরকার, যা মুজিবনগর সরকার বলেও পরিচিত। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয় খন্দকার মোশতাককে। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু সরকার গঠন করলে তাকে মন্ত্রী করেন।

বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষ হলেও দলে ডানপন্থি হিসেবেই পরিচিত ছিলেন মোশতাক। ১৯৭৪ সালে বাকশাল গঠিত হলে সেখানে উপরাষ্ট্রপতি করা হয় তাকে। এরপরেও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত হন তারই ঘনিষ্ঠজন মোশতাক।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ধাপের চূড়ান্ত তালিকায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার নামও। এর আগে কয়েকবার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হলেও তাদের নাম ছিল না। ফাইল ছবি

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন মোশতাক। এই পদে ছিলেন মাত্র ৮৩ দিন। দায়িত্ব নেয়ার পরই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাজা বন্ধ করতে জারি করেন ‘ইনডেমনিটি বিল’। যে ‘জয় বাংলা’ স্বাধীনতার স্লোগান ছিল তা বাদ দিয়ে চালু করেন ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’। বাংলাদেশ বেতারের নাম পাকিস্তানের আদলে পরিবর্তন করে রাখেন রেডিও বাংলাদেশ।

মোশতাকের সময়েই কারা অভ্যন্তরে হত্যা করা হয় চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মো. মনসুর আলী ও এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামানকে।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য হত্যাকারীদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য হবে। অন্য খুনিদের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। আমলনামাসহ থাকবে। তাদের খেতাব বাতিল হয়েছে। সেটা অন্য জিনিস। খেতাব দেয়াটা হচ্ছে কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা। আর যেটা মুক্তিযোদ্ধা এটা হলো অর্জন।

‘যেমন আমি মুক্তিযোদ্ধা, এটা আমার অর্জন। আমি যদি আজ হত্যা করি তাহলে আমি খুনি, বিচার হবে। তখন খুনি হিসেবে শাস্তি পাব। কিন্তু আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি এটা তো আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। মুক্তিযোদ্ধা থাকবে। যেগুলো বাতিলযোগ্য আমরা বাতিল করেছি।’

একই যুক্তিতে মুক্তিযুদ্ধ করার কারণেই জিয়াউর রহমানের নামও তালিকায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আ ক ম মোজাম্মেল। বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জিয়াউর রহমানেরও নাম আছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা মুক্তিযোদ্ধা না, এটা কিন্তু বলিনি। তাদের খেতাব আমরা বাতিল করেছি।

‘কারণ ৭১ সালে যিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তিনি তো মুক্তিযোদ্ধা। আমরা তো অস্বীকার করি না। তাদের অপকর্মটা বা চেতনাবিরোধী কাজ যেটা করেছে বা জাতির পিতাকে হত্যার জন্য যেসব সুবিধা বাতিলযোগ্য তা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা না এটা বলা যাবে না।

মন্ত্রী বলেন, ‘না হলে এটা ইতিহাস বিকৃতি হবে। যদি বলি জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেনি, এটা তো ঠিক হলো না। তিনি সেক্টর কমান্ডার ছিলেন, জেড ফোর্সের কমান্ডার ছিলেন, যুদ্ধ করেছেন, পরবর্তীতে কী করেছে তার শাস্তি সে পাবে।’

মুক্তিযোদ্ধাদের এই তালিকায় রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতাকেও। এর আগে কয়েকবার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হলেও তাদের নাম ছিল না।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ধাপের তালিকায় বরিশালের ১২ হাজার ৫৬৩, চট্টগ্রামের ৩০ হাজার ৫৩, ঢাকার ৩৭ হাজার ৪৮৭, ময়মনসিংহের ১০ হাজার ৫৮৮, খুলনার ১৭ হাজার ৬৩০, রাজশাহীর ১৩ হাজার ৮৮৯, রংপুরের ১৫ হাজার ১৫৮ এবং সিলেটের ১০ হাজার ২৬৪ জনের নাম রাখা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর