ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন উপলক্ষে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা সেজেছে নতুন সাজে। উপজেলার যশোরেশ্বরী কালীমন্দির সংস্কার ও রং করা শেষ হয়েছে বেশ আগেই। রাস্তাঘাট সংস্কার ও হেলিপ্যাড নির্মাণের কাজও শেষ। নিরাপত্তার দিকটি পর্যালোচনা করতে ঘন ঘন আকাশে টহল দিচ্ছে হেলিকপ্টার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুর গ্রামসহ আশপাশের এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। সোনার মোড় ও ঈশ্বরীপুর মোড় থেকে শুরু হয়েছে পুলিশি প্রহরা। স্থানীয় লোকজন ছাড়া বাইরের কাউকে প্রবেশে অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।
এ. সোবহান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হেলিপ্যাড নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। অদূরেই বিলের মধ্যে নির্মিত হয়েছে আরও তিনটি হেলিপ্যাড।
এ.সোবহান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নির্মিত হেলিপ্যাড
হেলিপ্যাড থেকে কালী মন্দির পর্যন্ত ১কিলোমিটার সড়কের চারপাশে সিসিটিভির ক্যামেরা বসানো হয়েছে। নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে পুরো ১ কিলোমিটার সড়ক।
নিরাপত্তার পুরো দিকটি তত্ত্বাবধান করছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। অতিথিদের জন্য ভিআইপি লাউঞ্জ প্রস্তুত। মন্দিরের পাশে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় ইটের সলিং (হেরিং বন্ড) বসানো হয়েছে। পুরোহিতদের ট্রায়ালও সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, নরেন্দ্র মোদি ২৭ মার্চ সকাল ১০ টার দিকে হেলিকপ্টারে করে ঈশ্বরীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে নির্মিত হেলিপ্যাডে নামবেন। পরে তিনি গাড়িযোগে এক কিলোমিটার দূরে একই গ্রামে অবস্থিত যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে যাবেন।
মন্দিরের পুরোহিত দিলীপ মুখার্জী জানান, ২৭ মার্চ সকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুরের প্রাচীন এই মন্দির পরিদর্শন করবেন। পূজা-অর্চনা করার কথাও রয়েছে তার।
পুরানমতে, সতীর ৫১ পীঠের এক পীঠ (করকমল বা পানিপদ্ম) ঈশ্বরীপুর গ্রামে পতিত হয়েছিল। তাই ধর্মীয়ভাবে মন্দিরটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
সাতক্ষীরাবাসীর আশা, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ভারত-বাংলাদেশ ভিসামুক্ত চলাচলের ঘোষণা আসুক । অনেকেই তাদের এই আশার কথা ব্যক্ত করেছেন।
সাতক্ষীরার আইনজীবী অরুপ রায় বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশা, পাকিস্তান ছাড়া সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের মধ্যে ভিসামুক্ত চলাচলের ঘোষণা দেবেন। আমরা বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ভিসামুক্ত সীমান্ত চাই।
এদিকে নরেন্দ্র মোদির সফরকে সামনে রেখে তার নিরাপত্তার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি ঈশ্বরীপুর আসেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। তিনি কালী মন্দিরে পূজা দেন। পরে সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তিনি নিরাপত্তার বিষয়টি অতি গুরুত্ব সহকারে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অবগত হন।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি হাইকমিশনার রাজেশ কুমার রায়না, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
দোরাইস্বামী ঈশ্বরীপুরে নির্মিত চারটি হেলিপ্যাড, মন্দির প্রাঙ্গণের বিশ্রামাগার, আপ্যায়ন কক্ষ এবং সংস্কার করা রাস্তাও পরিদর্শন করেন ।
নিরাপত্তার বিষয় পর্যালোচনা করতে ঘন ঘন আকাশে টহল দিচ্ছে হেলিকপ্টার
শ্যামনগর উপজেলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের সভাপতি ও নকিপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণান্দ মুখার্জি বলেন, নরেন্দ্র মোদির আগমনে মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে।
মোদির আগমন উপলক্ষে পল্লী বিদ্যুতের একটি উচ্চশক্তি সম্পন্ন ট্রান্সমিটার লাগানো হয়েছে, যাতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম আবুজর গিফারী জানান, নরেন্দ্র মোদির আসার খবরে শ্যামনগরের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। তাকে বরণ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তারা।
অতিথিকে বরণ করতে তিন পর্যায়ের প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি হেলিকপ্টারে করে এখানে আসবেন। সে জন্য তিনিসহ সফরসঙ্গীদের জন্য ৪টি হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হয়েছে। ভিআইপি লাউঞ্জ নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। পুরোহিতও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হাইকমিশনারও সার্বিক প্রস্তুতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। হ্যালিপ্যাড থেকে কালী মন্দির পর্যন্ত সড়কের দুই পাশ নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে।
তিনি আরো জানান, মোদির বিশ্রামের বিষয়টি মাথায় রেখে স্থানীয় ভুমি অফিসকে সাজানো হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। নরেন্দ্র মোদিকে বহনকারী বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার ২৭ মার্চ সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে শ্যামনগরের এ. সোবহান মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে নবনির্মিত হ্যালিপ্যাডে অবতরণ করবেন।
৯ টা ৫০ মিনিটে তিনি কালী মন্দিরে পূজা দেয়ার জন্য প্রবেশ করবেন। সেখানে তিনি ২০ মিনিট অবস্থান করে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
নরেন্দ্র মোদির আগমন উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, নরেন্দ্র মোদির সফর নিরাপদ করতে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে। ৩ মার্চ থেকে ছয় প্লাটুন পুলিশ এখানে দায়িত্ব পালন করছে। এ ছাড়া এসএসএফের চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।