সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট ঘটনায় সরকার দলের লোকেরাই দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মেজর হায়দার বীর উত্তম মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
‘সুনামগঞ্জের নোয়াগাঁও-এ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও লুটপাটের প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে দুস্কৃতিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি’তে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে নোয়াগাঁও পরিদর্শনের বিবরণ তুলে ধরেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ অনেকে।
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মেজর হায়দার বীর উত্তম মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার দুপুরে একদ সম্মেলন। ছবি: নিউজবাংলা
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘প্রশাসনও হামলার কথা জানত। প্রশাসন তাদের (গ্রামবাসীকে) আশ্বস্ত করে বলেছিল, হামলা হবে না। তাই গ্রামবাসী বাড়িতেই ছিল। তবু হামলা হয়েছে। এই ঘটনা আমি খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেছি। এই কাজে মসজিদের তিনটি মাইক ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের ওপর কর্তৃত্ব কাদের থাকে? সরকারি দলের থাকে।
‘এতদিন থাকতে ১৭ মার্চকে কেন তারা বেছে নিল? বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে কেন বেছে নিয়েছে? কারা বেছে নিয়েছে? সরকার দলের কর্মীরা। বেছে বেছে এই দিনটাতেই তারা এই কাজটি করেছে।’
প্রশাসনের নির্লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনে তিনি আরও বলেন, ‘সেখানের ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার পেয়েছি। যাদের মধ্যে ১০ জন সংখ্যালঘু এবং একজন মুসলিম। স্থানীয় এই ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা আমার কাছে অভিযোগ করেছেন, হামলার বহু আগে তারা ইউএনওকে জানিয়েছেন এবং সাহায্য চেয়েছেন, কিন্তু তাদের ইউএনও সাহায্য তো করেইনি বরং ফোনে ওই সময় দুর্ব্যবহার করেছেন।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ সময় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৫০ পরিবারের ঘর নির্মাণ এবং একজন বিচারপতি, সাবেক আইজিপি নুর মোহাম্মদ ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা এম করিমের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান। দাবি জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোটবোন শেখ রেহানাকে প্রধান করে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন এবং মসজিদের মাইক ধর্মীয় কাজ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার না করার।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই ট্রাস্টি বলেন, ‘সেখানকার মানুষ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আনাটা পছন্দ করে নাই। মোদির সফরের বিরুদ্ধের ক্ষোভ প্রকাশের জন্যই তারা ওই জায়গাটা বেছে নিয়েছে। ১৭ মার্চকে বেছে নিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে মোদির আগমনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের জন্য সরকার দলের লোকেরা এই কাজ করেছে।’
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সমালোচনা করে নোয়াগাঁওয়ের যুবক ঝুমন দাস ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এর জেরে গত ১৭ মার্চ সকালে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা চালিয়ে ৭টি মন্দির ও ৮৭টি বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও আসবাবপত্র তছনছ করা হয়।
এ ঘটনায় শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল করিম অজ্ঞাতপরিচয় কয়েক শ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ছাড়া হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার ৮০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
একটি মামলার প্রধান আসামি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও যুবলীগ নেতা শহীদুল ইসলাম স্বাধীনসহ ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।