মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার।
তালিকায় নাম আছে যুদ্ধ পরিচালনা করা স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের চার শীর্ষ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানের।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের এই তালিকায় বরিশালের ১২ হাজার ৫৬৩, চট্টগ্রামের ৩০ হাজার ৫৩, ঢাকার ৩৭ হাজার ৪৮৭, ময়মনসিংহের ১০ হাজার ৫৮৮, খুলনার ১৭ হাজার ৬৩০, রাজশাহীর ১৩ হাজার ৮৮৯, রংপুরের ১৫ হাজার ১৫৮ এবং সিলেটের ১০ হাজার ২৬৪ জনের নাম রাখা হয়েছে।
প্রথমবারের মতো শহিদ মুদ্ধিজীবীর তালিকাও প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকাশিত প্রথমধাপের তালিকায় রাখা হয়েছে ১৯১ শহিদ বুদ্ধিজীবীর নাম।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করলেও তাদের কোনো তালিকা করতে পারিনি। বিলম্বে হলেও আমরা সে তালিকা করা শুরু করেছি। দেশের প্রখ্যাত গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
‘ইতোমধ্যে কমিটি শহিদ বুদ্ধিজীবীদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে। প্রথম ধাপে আমরা ১৯১ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করছি। যাচাইবাছাই শেষে ধাপে ধাপে আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেন, ‘তালিকায় নাম নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। যখন আমরা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করলাম দেখলাম প্রায় ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোনো ভাতা পাবে না। কারণ তাদের নামের মধ্যে বিভ্রান্তি ছিল।
‘আমরা প্রায় এক বছর চেষ্টা করেছি। আমাদের চেষ্টা ছিল যাতে নির্ভুলভাবে কাজটা করতে পারি। আমাদের আরও ২০ হাজার প্রস্তুত। তারপরেও আমরা প্রকাশ করলাম না। তবে তাদের আবার ভাতাও আমরা বন্ধ করিনি।’
নতুন তালিকা প্রকাশে আগের সব তালিকা স্ময়ংক্রিয়ভাবেই বাদ হয়ে যাবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা যখন আমরা বলব চালু হয়ে গেল, তখন অটোমেটিক্যালি আগেরটা বাদ। এটা এমপ্লাইড।
‘এটা হলো চূড়ান্ত তালিকা। আর আগেরগুলো ছিল প্রবেশনারি। সার্টিফিকেটগুলো যদি দেখেন দেখবেন সাময়িক সনদ লেখা আছে। গেজেটের মধ্যেও লেখা আছে চূড়ান্তের আওতাধীন। এখন যেটা হলো এটাই ফাইনাল।’
তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া তুলে ধরে আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, ‘আমরা ৩৫ হাজার জনের নাম পাঠিয়েছিলাম যাচাই বাছাইয়ের জন্য। আমরা এরই মধ্যে ৪৩৪টি উপজেলা থেকে নাম পেয়েছি। প্রায় ৬০টি উপজেলা এখনও বাকি আছে। এগুলো সব রেডি করেছি।
‘আগামী মিটিংয়ে অনুমোদনের জন্য সেটা তোলা হবে। আমরা আইনি কোনো ব্যত্যয় ঘটাতে চাই না। সেগুলো আমরা ৩০ এপ্রিল গেজেটধারীদের তালিকা প্রকাশ করব। এছাড়াও অভিযোগ যেগুলো আছে সেগুলো শুনানি হবে। সেগুলো আমরা ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করব। মে এবং জুনে চূড়ান্ত করব।’
তিনি বলেন, ‘ট্রেনিং নেয়ার পর যদি কেউ পাকবাহিনী বা তাদের দোসরদের হাতে ধরা পড়েছেন বা শাহাদাদ বরণ করেছেন তারাও মুক্তিযোদ্ধা শহিদ। আর ৩০ লাখ হচ্ছে গণশহিদ। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় মারা গেছেন তারা হলের যুদ্ধকালীন গণশহিদ। শহিদ নিয়েও আমাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।
‘গণশহিদদেরও একটা রেকর্ড আমরা রাখব। তারাও তো জীবন দিয়েছেন। তাদের একটা স্বীকৃতি আমরা দিতে চাই। তার পরিবারের একটা সান্ত্বনা থাকবে না তা হয় না। তাই আমরা ভাবছি তাদের কীভাবে সম্মানিত করা যায়। একটা তালিকা বা সনদ যদি দেই তাও তো সান্ত্বনা, আর্থিক সুযোগ সুবিধা পাক বা না পাক। সম্ভব হলে সেটাও চেষ্টা করবে সরকার। তবে এটা পরের ধাপে হবে।’
সেনাবাহিনীর গেজেট বিতর্কিত
সেনাবাহিনীর করা মুক্তিযোদ্ধার তালিকাকে বিতর্কিত বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল। বলেন, ‘সেনাবাহিনীর তো কোনো তালিকা করার সুযোগই নেই। তারা তো ছিল ফ্রন্টে। যুদ্ধ কারা করেছে জানে দেশের মানুষ। সিনিয়র সিটিজেনরা জানেন তার গ্রামের বা পাশের গ্রামের কে যুদ্ধ করেছে।
‘বাহিনীর সদস্যরা ছিল ফ্রন্টে, যুদ্ধের ফ্রন্টে তাদের জানার কোনো সুযোগ নেই। শুধু তারাই সত্যবাদি লোক আর বাকিরা মিথ্যাবাদি এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আমি এথিক্যালি খুব জোড়ালোভাবে একটা জিনিস বলতে চাই, সেনাবাহিনী যে গেজেট করেছে সেটি বিতর্কিত গেজেট।’
মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের অধিকার হচ্ছে, তাদের ইউনিটের থেকে যারা যুদ্ধ করেছে তার গেজেট করার, যেকোনো বাহিনী। তারা তাদের বাহিনীর সদস্য হিসেবে যারা যুদ্ধ করেছে তাদের তালিকা করার দায়িত্ব তাদের। তাদের রেকর্ড আছে। তারা সেটা করবেন।’