বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বকে শোনানোর জন্য বাংলাদেশকে একটি গল্প দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সু্বর্ণজয়ন্তির অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
লোটে শেরিং বলেন, ‘আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, পৃথিবীর সব মানুষ, সব জাতি সব দেশের একটা গল্প থাকে অন্যকে বলার জন্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে বিশ্বকে শোনানোর জন্য এমনই একটি গল্প দিয়ে গেছেন।
‘আমার আজ খুব গর্ব হচ্ছে যে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে বসে এই গল্প শোনার সুযোগ পাচ্ছি। আমি খুব গর্ববোধ করছি। কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার জন্য অনু্প্রেরণা, আমার কাছে মায়ের মতো।’
এর আগে বহুবার বাংলাদেশ সফর করলেও এবারে সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন লোটে শেরিং। বলেন, ‘বাংলাদেশকে সব সময়ই আমার দ্বিতীয় ঘর বলেই মনে করি, আর এ কারণে এখানে সফর সব সময়ই আমার জন্য আনন্দের। কিন্তু এবারের কারণটা আরও বৃহৎ।
‘আমি এখানে এসেছি দুটো অত্যন্ত স্মরণীয় উদযাপনকে সামনে রেখে। আমরা সবাই জানি, আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করছি এবং যে দেশের জন্য তিনি জীবন দিয়েছেন সে দেশের সুবর্ণজয়ন্তীও উদযাপন করছি।’
এ সময় কোভিড মহামারির প্রসঙ্গও উঠে আসে লোটে শেরিংয়ের বক্তব্যে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এমন এক সময় আমরা এখানে সমবেত হয়েছি যখন কোভিডের কারণে বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
‘আমি যেসব পরিবার তাদের প্রিয়জন হারিয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আশা করছি খুব শিগগিরই এই অতিমারির হাত থেকে সারা বিশ্ব রক্ষা পাবে।’
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং
লোটে শেরিং বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে তাদের নেতা হিসেবে পেয়ে সত্যিই ভাগ্যবান। আমি নিশ্চিত শেখ মুজিবুর রহমানও এই বাংলাদেশ এবং তার কন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে গর্ববোধ করছে।
‘এত জনসংখ্যা থাকার পরেও শেখ হাসিনা সরকার এই অতিমারিকে অত্যন্ত শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। এই বিশেষ সময়ে সমর্থনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। যদিও অনেক দ্বিপক্ষীয় বিষয় রয়েছে তথাপি আমার এই সফরের মূল উদ্দেশ্যই হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানানো।’
লোটে শেরিং বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি একজন কন্যাকে শ্রদ্ধা জানাতে যিনি তার পিতার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন। যেমনটা আমি আগেই বলেছি, তিনি মানুষের স্বাধীনতা আর সুখকে সবার আগে বিবেচনায় রেখেছেন।
‘সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। এটি যতবার আমি এখানে সফর করেছি ততবারই চোখে পড়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গত ১০ বছরে যে উন্নতি হয়েছে তা সত্যিই অসাধারণ। অতিমারির মধ্যেও আপনারা এই উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ জিডিপি ধরে রাখতে পেরেছেন। এজন্য আপনাদের অভিনন্দন। উন্নয়নের যে ভবিষ্যতবাণী তা আরও আশা জাগানিয়া। বাংলাদেশের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশের এই অর্জনে আমরা গর্বিত।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-ভুটান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনের বিষয়টিও উঠে আসে লোটে শেরিংয়ের বক্তব্যে।
অনুষ্ঠানে আনন্দ সংকর রায়ের লেখা পঙ্কতি, ‘যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা গৌরি বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’ বাংলায় আবৃত্তি করেন তিনি। বলেন, ‘এ কথাগুলো আমার ভালো লেগেছে।’