মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের আগেই বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভুটান। একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর খবরটি রেডিওতে শুনেছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সেই দিনের স্মৃতি উঠে আসলো শেখ হাসিনার কথায়।
বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে এ সেই দিনটির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘ওই দিনটির কথা আমি কখনও ভুলতে পারি না। এ কারণে যে তখন আমরা বন্দি শিবিরে ছিলাম।
‘পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যেমন আমার বাবা শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে আমার মাকে গ্রেপ্তার করে। সেদিন আমি, আমার ছোট বোন রেহানা, ছোট্ট রাসেল এবং আমার ছোট্ট জয় মাত্র ৫ মাসের একটা শিশু। আমরা সবাই কিন্তু বন্দি খানায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেদিন রেডিওতে আমরা প্রথম যখন শুনতে পারলাম যে ভুটান আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সেটা আমাদের জন্য একটা অনন্য দিন ছিল। হাসি কান্নার মধ্য দিয়ে সেই দিনটি আমাদের কেটেছিল। কাজেই আমরা সব সময় ভুটানের কথা স্মরণ করি।’
বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির জনগণকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ভুটান আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশি বন্ধুরাষ্ট্র। ভৌগোলিক নৈকট্য ছাড়াও আমাদের রয়েছে প্রায় একই ধরনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
‘আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের অবস্থান প্রায় এক এবং অভিন্ন। দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বহু প্রাচীন। ১০ম শতাব্দীতে বাংলাদেশ ভূখন্ডে জন্মগ্রহণকারী বৌদ্ধ ধর্মগুরু মহাসিদ্ধ তিলোপা তিব্বত-ভুটানে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেন।’
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভুটানের প্রয়াত রাজা জিগমে দোর্জি ওয়াংচুকের সহযোগিতাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভুটানের প্রয়াত মহামান্য তৃতীয় রাজা জিগমে দোর্জি ওয়াংচুক এবং সেদেশের জনগণ স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের শুধু সমর্থনই দেননি, সাধ্যমত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
‘ভুটানের তরুণেরা ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আহত এবং অসুস্থ বাঙালি শরণার্থীদের সেবা করেছিলেন। ভুটানই প্রথম দেশ যে নাকি স্বাধীন বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি প্রদান করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় লাভের আগেই ৬ ডিসেম্বর ভুটান বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। আমরা ভুটানের জনগণের সে অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য আমরা ২০১২ সালে ভুটানের মহামান্য তৃতীয় রাজা জিগমে দোর্জি ওয়াংচুককে ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’ সম্মাননায় ভূষিত করেছি।’
দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভুটানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, পর্যটন, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে সহযোগিতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভুটানি ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশে চিকিৎসাশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে।
‘আজকের সম্মানিত অতিথি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হতে চিকিৎসাবিদ্যায় গ্রাজুয়েশন করেছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। ভুটানের মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগী হতে পেরে আমরা গর্বিত।’