সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে নেপালের বিরাটনগরে সরাসরি ফ্লাইট শুরুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। খুব শিগগিরই ফ্লাইট শুরু নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হবে বলে নিশ্চিত করেছেন বেসামরিক বিমান চলাচল প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি নেপালের রাষ্ট্রপতি সফরে এসেছিলেন। তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন নেপালের সঙ্গে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ফ্লাইট অপারেট করার। সম্ভবত আমরা সেদিকে অগ্রসর হব।’
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সোমবার দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি। ওই দিন বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত সহজ করতে সৈয়দপুর ও বিরাটনগরের মধ্যে ফ্লাইট চলাচল আবশ্যক।’
এর আগে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দর আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
অবশ্য নেপালের এ প্রস্তাব নতুন কিছু নয়। কয়েক বছর ধরেই নেপালের শীর্ষ কর্মকর্তারা বাংলাদেশের কাছে এ প্রস্তাব দিয়ে আসছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্মিত সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু হয় ১৯৭৭ সালে। বিমানবন্দরটিকে আঞ্চলিক যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমানে সংস্কার কাজ চলছে। এর রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ফুট, প্রস্থ ৩০০ ফুট।
বিমানবন্দরের পরিধি বাড়াতে সম্প্রতি ৯১২ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। মানোন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দরের রানওয়ে ১২ হাজার ফুটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন টার্মিনাল ভবন।
তবে কবে নাগাদ ফ্লাইট শুরু হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। তিনি বলেন, ‘এটার মধ্য দিয়ে আলোচনা কেবল শুরু হলো। নেপালের মাননীয় রাষ্ট্রপতি এটা প্রস্তাব দিয়েছেন।
‘নীতিগতভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ফ্লাইট অপারেট করব। এখন বাকিটা কীভাবে হবে, কবে থেকে হবে, এটা দুই দেশের মধ্যে আলোচনায় ঠিক হবে।’
ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু যেতে আকাশপথে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। সৈয়দপুর-বিরাটনগর রুটে এটি লাগবে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট। এতে পরিবহন খরচও অনেক কমে আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যাত্রী আনা-নেয়ার পাশাপাশি এ বিমানবন্দর দিয়ে নেপালে কম খরচে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ বাড়বে বলেও মত তাদের।
বাংলাদেশ থেকে নেপালে পাটজাত পণ্য, ব্যাটারি, তৈরি পোশাক, প্রসাধনী পণ্য, ঔষধসহ বেশ কিছু পণ্য রপ্তানি হয়। এ ছাড়া অনেক নেপালি শিক্ষার্থী বাংলাদেশের মেডিক্যাল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা করছেন।
সৈয়দপুর-বিরাটনগর ফ্লাইট শুরু হলে পণ্য আনা-নেয়া অনেক সহজ হবে বলে মনে করছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পণ্য আনা-নেয়ার জন্য এটা অত্যন্ত ভালো সিদ্ধান্ত হবে।’
তবে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে কী ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হবে এবং কত টাকা ভাড়া নির্ধারণ হবে তার ওপর নির্ভর করছে রুটটি লাভজনক হবে কি না।’
ভারত-নেপাল সীমান্তে অবস্থিত বিরাটনগর বিমানবন্দরটি হলো নেপালের তৃতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। এটি সমুদ্রসীমা থেকে ২৩৬ ফিট উঁচুতে অবস্থিত। ২০১৯ সালে নেয়া এক সিদ্ধান্তে এই বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে নেপাল সরকার। বর্তমানে বিমানবন্দরটিতে যে রানওয়ে রয়েছে সেটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ হাজার ফিট।