রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা তিন লাখ বলে মন্তব্য করেছিলেন বলে যে অভিযোগ রয়েছে, এর তদন্ত প্রায় শেষ।
তদন্ত প্রতিবেদন শিগগির মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে জমা দেয়া হবে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন কমিটির এক সদস্য।
অভিযোগ তদন্ত করছে তিন সদস্যের একটি কমিটি। কমিটির প্রধান করা হয়েছে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ অলিউল আলমকে। অন্য দুই সদস্য হলেন রাজশাহী সিটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ এফএম বজলুল কবির ও রাজশাহী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হুমায়ন রেজা।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চত্বরে আলোচনা সভা হয়। সেখানে ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বক্তব্য দেন। পরে তার বক্তব্যকে ঘিরে অভিযোগ ওঠে, তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন।
এ অভিযোগ তোলেন জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের সভাপতি সাইদুর রহমান। তিনি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগকারী সাইদুর ভোরের কাগজের নিজস্ব প্রতিবেদক ও রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সভাপতি।
অভিযোগে বলা হয়, ওই দিন মোয়াজ্জেম হোসেন তার বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা ৩০ লাখ নয়, ৩ লাখ বলে দাবি করেন।
মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আসামি হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
শিক্ষাবোর্ড সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল গত বছরের ১৪ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানান।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত ২ ফ্রেব্রুয়ারি অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির সদস্য হুমায়ন রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চিঠি পাওয়ার পরই তদন্ত শুরু করি। তদন্তের জন্য আমরা অভিযুক্ত বোর্ড সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি। তাদের লিখিত বক্তব্যও নেয়া হয়ে গেছে। খুব শিঘ্রই কমিটির তিন সদস্য মিটিং করে একটি প্রতিবেদন দেয়া হবে।’
তিনি আরও জানান, কমিটিকে প্রথমে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে তদন্তের জন্য কিছুটা বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয়। এজন্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে কিছুটা বাড়তি সময় নেয়া হয়।
তবে তদন্তে এ পর্যন্ত কী পাওয়া গেছে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি হুমায়ন রেজা।
জানতে চাইলে বোর্ড সচিব মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘তদন্ত কমিটি আমার সাথে কথা বলেছে। তাদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র ও প্রমাণাদি দিয়েছি।’
ওই দিন শহিদদের সংখ্যা নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য করেননি দাবি করে তিনি বলেন, শুধু তিনি নিজেই নন, তারা পারিবারিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একনিষ্ঠ মানুষ। এটি সবারই জানা। তার মুখ থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত কথা বের হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তিনি আরও বলেন, একটি মহল সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করে এ অভিযোগ করেছে। স্থানীয় কয়েকটি দৈনিকে এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর তিনি প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছিলেন, তাও ছাপা হয়েছিল।
সোমবার জানতে চাইলে অভিযোগকারী সাইদুর বলেন, ওই ঘটনার পর তিনি বোর্ড সচিব মোয়াজ্জেমের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে তিনি কথা বলেন। তখন জানতে পারেন, মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে অনেকে যে বিতর্কিত তথ্য দেন মোয়াজ্জেম সেটিই তুলে ধরেছিলেন। এটি তার নিজের মত ছিল না।
সাইদুর আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে তো এখন আর তার কোনো অভিযোগ নেই।