বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল, আকাশ ও নৌপথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে আগ্রহী কাঠমান্ডু।
সোমবার বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এ আগ্রহের কথা জানান নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি।
তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত সহজ করতে সৈয়দপুর ও বিজয়নগরের মধ্যে ফ্লাইট চলাচল আবশ্যক। এই সঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে জলপথে যোগাযোগ স্থাপনও করা যেতে পারে। এতে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতে খরচ আরও কমে আসবে।
‘সেই সঙ্গে রেল যোগাযোগও এ খাতে সহযোগী ভূমিকা পালন করতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশি পর্যটকরা নেপালের পার্বত্য অঞ্চলে এবং নেপালি পর্যটকরা বাংলাদেশের সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ ও সংস্কৃতি বিনিময়ের সুযোগ পাবেন।’
ঢাকা সফরে আমন্ত্রণ জানানোয় রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদকে ধন্যবাদও জানান নেপালের রাষ্ট্রপতি। বলেন, ‘এই সফর নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যেকার সুসম্পর্ককেই প্রতিনিধিত্ব করছে। নেপালের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এই সুন্দর দেশে এটিই আমার প্রথম সফর। ব্যক্তিগত সফরে এর আগেও আমি এখানে এসেছি।’
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ব্যাপক প্রশংসা করে নেপালের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবন যাপনে অনেক উন্নতিই আমার চোখে ধরা পড়েছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ অনেক অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে এবং দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার প্রয়াস এখন অব্যাহত রয়েছে।
‘আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র এবং এখানকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দ্রুতগতিতে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক বিকাশ হচ্ছে তা দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সদিচ্ছার প্রশংসা করছি।
‘বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা এবং এই আঞ্চলের বলিষ্ঠ নারী নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সক্রিয় ও সবল নেতৃত্বে সোনার বাংলার রাষ্ট্রীয় স্বপ্ন বাস্তবায়নে শুভ কামনা জানাচ্ছি। নিকট বন্ধু হিসেবে নেপাল বাংলাদেশের ব্যাপক আর্থিক উন্নতি দেখতে চায়। আমি মনে করি, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়লেই তার প্রতি উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করা হবে।’
বিদ্যা দেবী বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ভৌগোলিকভাবেও দুই দেশ অনেক নিকটে অবস্থান করছে। ভৌগোলিক নৈকট্য, সংস্কৃতি, পারস্পরিক সহযোগিতামূলক মনোভাব আমাদের সম্পর্ককে মজবুত করেছে।
‘৮ এপ্রিল ১৯৭২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক নিরন্তর সামনে এগিয়েছে।’
প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করে দুই দেশই উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে পারে বলেও মন্তব্য করেন নেপালের রাষ্ট্রপ্রধান। বলেন, ‘নেপাল, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদ, মানব সম্পদ, ইতিহাস, সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক থেকে ধনী। আমাদের বিকাশের ধারা বজায় রাখা এবং জনগণের সমৃদ্ধির জন্য এই অমূল্য সম্পদের সঠিক ব্যবহার মহত্বপূর্ণ হতে পারে।
ব্যবসা, জলবিদ্যুৎ, পর্যটন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জলজ সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে আমাদের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। এই ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের সম্পর্ক আরও সামনে এগিয়ে নেয়া প্রয়োজন।’
তবে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর তাগিদ দিয়ে বিদ্যা দেবী বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়নেরও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। দুই দেশের উন্নতির জন্য এই বাণিজ্য ঘাটতি দূর করা প্রয়োজন।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে। জলবিদ্যুৎ বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজগুলোতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেপালি শিক্ষার্থী শিক্ষা অর্জন করছে। একইভাবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা নেপালে বৌদ্ধশাস্ত্র, ঔষধ বিজ্ঞান পড়ছেন।’
জলবায়ু ঝুঁকির বিষয়টিতেও বক্তব্যে প্রাধান্য দেন নেপালের রাষ্ট্রপতি। বলেন, ‘বাংলাদেশ, নেপাল দুই দেশই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে রয়েছে। নেপালের হিমালয় পর্বতমালায় বরফের স্তর ও বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
‘এ কারণে অনাবৃষ্টি, অনিয়মিত বর্ষাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যাচ্ছে। সংকটগুলো সমাধানে দুদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতাও একান্ত প্রয়োজন।’