ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধী হলেও এর প্রতিবাদে রাজপথে না নামার কথা জানিয়েছে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
মোদির আগমন ঠেকাতে গত সপ্তাহে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেয়া হেফাজত নেতা মামুনুল হক বলেছেন, তারা ‘কোনো উগ্রবাদী সংগঠন নয়, শান্তিপূর্ণ সংগঠন।’
আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের আয়োজনে ঢাকায় আসছেন মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান।
তার ঢাকা সফরের প্রতিক্রিয়ায় কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দলগুলোর নানা প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সফরের চার দিন আগে সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে আসে হেফাজত।
মামুনুল হক বলেন, ‘আমাদের সংবাদ সম্মেলন দেশে রাষ্ট্রীয় একজন আমন্ত্রিত অতিথিকে নিন্দা জানানোর জন্য। হেফাজতে ইসলাম কোনো উগ্রবাদী সংগঠন নয়, শান্তিপূর্ণ সংগঠন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ জানানোই আমাদের কাজ। এখানে রাজপথে মিছিল অথবা সংঘাতমূলক কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে না।’
হেফাজত নেতা বলেন, ‘আমরা সংবাদ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আমাদের বক্তব্য সরকারের কাছে জানাচ্ছি। এ বক্তব্য অব্যাহত রাখব। এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এমন একজন ব্যক্তিকে দেশে চাচ্ছে না। এতে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী কলঙ্কিত হবে।
‘এবং যেকোনো উপায়ে নরেন্দ্র মোদির কাছে সংবাদ পৌঁছাবে যে মানুষ তাকে চাচ্ছে না। কাজেই তারও যদি আত্মসম্মানবোধ থেকে থাকে তাহলে তিনিও বাংলাদেশে আসবেন না।’
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেফাজতের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জুনায়েদ আল হাবীব। মোদির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের কাছে যার আরেক পরিচয় গুজরাটের কসাই। এ ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপনে এমন কাউকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা উচিত হবে না, যাকে এ দেশের মানুষ চায় না বা যার আগমন এ দেশের মানুষকে আহত করবে।’
মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে গুজরাটের দাঙ্গায় মুসলমানদের প্রাণহানি, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে সেখানে মন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে হেফাজত নেতা বলেন, এতে ‘আমাদের হৃদয়ে রক্তপাত হয়।’
কাশ্মীরে ‘মুসলিম নির্যাতন’ এবং নাগরিকত্ব আইনসহ ‘মুসলিমবিরোধী’ সিদ্ধান্তের হোতা মোদির অনুসারীদের হাতে দিল্লিতে মুসলমানের রক্তের বন্যা বয়ে গেছে অভিযোগ করে বলা হয়, ‘শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদের মিনার ভেঙে সেখানে হিন্দুত্ববাদী গেড়ুয়া পতাকা টানানো হয়েছে।’
শাল্লা হামলার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি
সুনামগঞ্জে শাল্লায় হিন্দু গ্রামে হামলায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।
মামুনুল হক বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে এ জন্য হেফাজতে ইসলাম সারা দেশে তৎপর ও সোচ্চার রয়েছে। সুনামগঞ্জের ঘটনাতেও এমন তথ্য মিডিয়াতে এসেছে, সেদিন সুনামগঞ্জে সাম্প্রদায়িক ঘটনায় বাধা দিয়েছে আলেম সমাজ।’
এই ঘটনার যাচাই-বাছাই ছাড়াই একশ্রেণির মিডিয়া তাৎক্ষণিকভাবে হেফাজতের ওপর দায় দিয়েছে বলেও দাবি করেন মামুনুল।
গত ১৫ মার্চ মামুনুল যান শাল্লা লাগোয়া দিরাইয়ে। সেখানে মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেয়ার পর শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামের এক যুবক ফেসবুকে তার সমালোচনা করে স্ট্যাটাস দেন।
এর জেরে ১৭ মার্চ দিরাইয়ের দুটি মসজিদে মাইকিং করে স্থানীয়দের জড়ো করেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। তারা মিছিল নিয়ে এসে ৮০টিরও বেশি বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করে।
জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘অসৎ উদ্দেশ্যে হেফাজতের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সংবাদপত্রের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে অন্ধ বিদ্বেষে ক্রমাগত নিউজ করে যাওয়া কোনো কোনো মিডিয়া হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এবং মাওলানা মামুনুল হককে জড়িয়ে তাদের অসত্য নিউজের ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রেখেছে।’
ঝুমন দাস আপনের স্ট্যাটাসকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল স্বীকার করে হেফাজত নেতা দাবি করেন, ওই যুবককে গ্রেপ্তারের পরেই তা শেষ হয়ে যায়।
এই ফেসবুক স্ট্যাটাসকে হাতিয়ার করে স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য শহীদুল ইসলাম স্বাধীন ওই হামলা চালিয়েছেন বলেও দাবি করেন হেফাজত নেতা।