বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মোদির ওড়াকান্দি সফরের পেছনে ভোটের রাজনীতি

  •    
  • ২১ মার্চ, ২০২১ ২২:৩৫

পশ্চিমবঙ্গের ভোটের রাজনীতির সঙ্গে পরোক্ষাভাবে জড়িয়ে আছে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীর ওড়াকান্দির নাম। এখান থেকে ছড়িয়ে পড়া মতুয়া সম্প্রদায় পশ্চিমবঙ্গে বড় ভোট ব্যাংক। 

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি যেসব জায়গায় যাবেন, তার একটি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় ওড়াকান্দি। সেখানে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান পরিদর্শন করবেন নরেন্দ্র মোদি।

কিন্তু বাংলাদেশের ভেতরেও প্রায় অখ্যাত একটি স্থানে কেন যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী? কে-ই বা এই হরিচাঁদ ঠাকুর?

বিষয়টি কৌতূহল জাগাচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সফরের পেছনে রয়েছে ভারতের নিজস্ব ভোটের রাজনীতি।

এ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে চলছে বিধানসভা নির্বাচনের তোড়জোর। ২৭ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে ভোটাভুটি। কয়েক দফায় চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত। মোদির দল বিজেপির জন্য পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূলকে হটিয়ে দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পশ্চিমবঙ্গের ভোটের রাজনীতির সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীর ওড়াকান্দির নাম। এ অঞ্চল থেকে ছড়িয়ে পড়া ‘মতুয়া’নামে একটি হিন্দু সম্প্রদায় পশ্চিমবঙ্গে বড় ভোট ব্যাংক, যারা তৃণমূলে ভোট দিয়ে থাকে বলে মনে করা হয়।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়ি। ছবি: নিউজবাংলা

১৯৪৭ সালে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারত এবং পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার সময় সবচেয়ে বেশি মানুষের দেশত্যাগের ঘটনা ঘটে বাংলা অঞ্চলে। তাই রাজনৈতিক সীমারেখা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মানুষের মানসিক নৈকট্য দীর্ঘদিনের।

নরেন্দ্র মোদি ২৭ মার্চ গোপালগঞ্জ সফরে যাবেন। আর সেদিনই প্রথম দফা ভোট হবে পশ্চিমবঙ্গে।

টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পরপরই মোদি হেলিকপ্টারে চেপে যাবেন ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়িতে।

মোদির ওড়াকান্দি সফর নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, কৌতূহল রয়েছে ভারতেও। অনেকেই জানতে এবং বুঝতে চাইছেন এই সফরের কার্যকারণ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলতেই মোদির সফরে যোগ হয়েছে ওড়াকান্দির নাম।

ওড়াকান্দি হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান।

হরিচাঁদ ঠাকুরের প্রপৌত্র ও কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর বলেন, ‘এরশাদ সাহেব প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ওড়াকান্দি তীর্থে এসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিরোধী দলের নেতা থাকার সময় ঠাকুরবাড়ি ভ্রমণ করেছেন। এখন মোদির সফর ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীর লোক, এসএসএফ ও প্রশাসন নিয়মিত ভ্রমণ করছে। তারা হেলিপ্যাডের জায়গা খুঁজছে। ঠাকুরবাড়ি ও ঠাকুরবাড়ির ৫০০ গজের মধ্যে দুইটা মাঠ আছে। সেখানেই হেলিপ্যাড হবে।’

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটের মিছিল

বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৮১১ সালে গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে নমশূদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন হরিচাঁদ ঠাকুর। পরবর্তীতে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের বিভিন্ন প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন তিনি। সংস্কারমূলক বিভিন্ন মতবাদের কারণে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের কাছে ‘অবতার’ হিসেবে বিবেচিত হতে থাকেন হরিচাঁদ ঠাকুর। গোপালগঞ্জের গণ্ডি ছাড়িয়ে তার মতাদর্শ ছড়িয়ে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। ক্রমেই বাড়তে থাকে ভক্ত সংখ্যা।

১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির সময় বহু মানুষ স্থানান্তরিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় হিন্দুদের অনেকে আশ্রয় নেয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে। ওই সময় হরিচাঁদ ঠাকুরের নাতি পি আর ঠাকুর যশোর সীমান্তঘেঁষা পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁর কাছে ঠাকুরনগরে গড়ে তোলেন মতুয়া মহাসংঘের সদরদপ্তর। তখন থেকে পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া সম্প্রদায় ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে।

বিশেষ করে উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং নদিয়ায় রয়েছে মতুয়া সম্প্রদায়ের আধিক্য। শুধু ভক্তের বিচারেই নয়, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতেও মতুয়াদের রয়েছে ব্যাপক প্রভাব।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে মতুয়া ভোটারের সংখ্যা অন্তত আড়াই কোটি। রাজ্যে ২৯৪টি আসনের মধ্যে ৬৩টি সংরক্ষিত তফসিলি জাতির জন্য। এই তফসিলিদের মধ্যে মতুয়াদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। শুধু তফসিলি আসনই নয়, অসংরক্ষিত বহু আসনেও ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মতুয়ারা।

ভারত ভাগের পর প্রথম দিকে পশ্চিমবঙ্গে মতুয়ারা ছিলেন কংগ্রেসের সমর্থক। পরে বামপন্থিদের সমর্থন করতে থাকেন তারা। সাম্প্রতিক সময়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রতি অধিকাংশ মতুয়া সমর্থন দেয়।

হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে ওড়াকান্দিতে স্নানোৎসব

২০১৪ সালে মতুয়া পরিবারের সদস্য কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর তৃণমূলের টিকিটে বনগাঁ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। কপিলকৃষ্ণের মৃত্যুর পর সাংসদ হন তার স্ত্রী মমতাবালা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও বিভিন্ন সময়ে নিজেকে মতুয়াদেরই একজন বলে দাবি করেছেন।

তবে সময়ের সাথে সাথে বিভক্তি এসেছে মতুয়াদের মধ্যেও। এই পরিবারের সদস্য শান্তনু ঠাকুর বিজেপির টিকিটে হারিয়ে দেন মমতাবালাকে। সর্বশেষ নির্বাচনে পাশের রানাঘাট আসনেও জয় পান বিজেপির জগন্নাথ সরকার। এই পরিসংখ্যান বলছে, মতুয়া ভোটে আর একচ্ছত্র আধিপত্য নেই তৃণমূলের। সেখানে শক্ত থাবা বসিয়েছে বিজেপি।

মতুয়া ভোটে ভাগ বসাতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান ওড়াকান্দি সফর করছেন বলে মত বাংলাদেশ ও ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষকদের।

আরও পড়ুন: ওড়াকান্দির মন্দিরে পূজা দেবেন মোদি

তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষের মতে, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিধানসভা ভোটে দলের জয় নিশ্চিত করতেই ওড়াকান্দি যাচ্ছেন। এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মানুষ অবশ্যই এর বিচার করবে।’

অন্যদিকে, বিজেপি নেত্রী ডাক্তার অর্চনা মজুমদার মানতে নারাজ কুনাল ঘোষের অভিযোগ। তার মতে, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সফর নিয়ে এভাবে কটাক্ষ করা যায় না। হরিচাঁদ ঠাকুরকে নিয়ে রাজনীতি করাও ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন অর্চনা মজুমদার।

তৃণমূলের সাবেক সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের অভিযোগ, বিজেপি প্রতিশ্রুতিভঙ্গ করেছে। এখন ভোটের জন্য আবার মতুয়াদের ভোটের লোভ দেখাচ্ছে।

বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর অবশ্য মনে করেন, মতুয়া ভোটের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওড়াকান্দি সফরের কোনো সম্পর্ক নেই।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওড়াকান্দি সফর তাই যতটা না ভাবাবেগের, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক মোড়কে মোড়া বলেই মত বিশ্লেষকদের।

এ বিভাগের আরো খবর