বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তালেবান হওয়ার হুমকি: সেই যুবকের সন্ধানে পুলিশ

  •    
  • ২১ মার্চ, ২০২১ ১৮:৫০

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিট বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে তার বক্তব্যের যে কনটেন্ট আছে, তা সরানোর চেষ্টা করছি। এর পাশাপাশি এ ধরনের বক্তব্য যে ব্যক্তি দিয়েছেন, তাকেও শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’

রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসী, তালেবান হয়ে বাংলাদেশকে আফগানিস্তানে পরিণত করতে চাওয়া সেই যুবকের খোঁজে পুলিশ।

তবে তার নাম কী, তিনি কোন মাদ্রাসা থেকে এসেছেন, সে বিষয়ে একেবারেই অন্ধকারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সেদিন যেসব দল সেখানে কর্মসূচি পালন করেছে, সেসব দলের নেতারা এখন দায় নিচ্ছেন না। ওই যুবককে চেনেন না বলে দাবি তাদের।

কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রীক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের একজন নেতা নিউজবাংলাকে বলেছেন, ওই যুবকের পরিচয় তাদের জানা নেই আর তারা এই বক্তব্য সমর্থনও করেন না।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদে গত শুক্রবার ধর্মভিত্তিক বেশ কয়েকটি দল জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ করে।

এ সময় বেশ উগ্র ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন বেশ কয়েকজন বক্তা, যাদের মধ্যে মধ্যবয়সী ওই বক্তা নিজে ‘সন্ত্রাসী হয়ে তালেবান জঙ্গিতে পরিণত হওয়ার’ ঘোষণার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে।

পুলিশের দুটি সংস্থা ওই যুবকের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহে নেমেছে বলে নিশ্চিত হয়েছে নিউজবাংলা। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কেউ বলার মতো কোনো তথ্য পায়নি।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিট বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে তার বক্তব্যের যে কনটেন্ট আছে, তা সরানোর চেষ্টা করছি। এর পাশাপাশি এ ধরনের বক্তব্য যে ব্যক্তি দিয়েছেন, তাকেও শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’

সেদিন বিক্ষোভ করা দলগুলোর নেতারা তালেবান হওয়ার হুমকিদাতাকে না চেনার দাবি করছেন

উগ্রবাদীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি বিদেশি অতিথিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি জোর দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা এ ধরনের প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে অতিথিদের নিরাপত্তা দিচ্ছি।

তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করব, দেশে একটি রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম হচ্ছে। সাবই যেন এতে সহযোগিতা করে।’

যা বলছে ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠন

ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের সহ প্রচার সম্পাদক এহসানুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এ ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই সমর্থন করি না। যিনি এই বক্তব্য দিয়েছেন, তার সঙ্গে হেফাজতের কোনো সম্পর্ক নেই্, তাকে আমরা চিনিও না। বিক্ষোভ শুরুর আগে অনেকেই বিক্ষিপ্তভাবে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই যুবকের বক্তব্য, আমাদের সাংগঠনিক বক্তব্য নয়।’

বায়তুল মোকাররমে সেদিন যারা বিক্ষোভ করেছে, তাদের মধ্যে খেলাফত মজলিস অন্যতম। দলের সহ প্রচার সম্পাদক আব্দুল হাফিজ খসরু বলেছেন, ওই বক্তা তাদের দলের কেউ না। তিনিও জানান, তিনি যা বলেছেন, সেটি তারা সমর্থন করেন না।

তিনি বলেন, ‘দেশে আইন কানুন আছে। সে অনুযায়ী প্রতিবাদ করতে হবে। আমরাও তাই করছি। যে ব্যক্তি তালেবান হওয়ার হুমকি দিচ্ছেন তার সঙ্গে আমাাদের দলের কোনো সম্পর্ক নেই।’

সেদিনের সমাবেশে ছিল না ইসলামী আন্দোলন যাদের সদরদপ্তর বায়তুল মোকাররমের পাশেই অবস্থিত।

দলটির একজন নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো এই এলাকায় থাকি। কিন্তু তাকে কখনও দেখিনি। আর বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, তারাও কেউ জানাতে পারেননি তিনি কে? মনে হচ্ছে মূলধারার কোনো দলের কেউ নন তিনি।’

কী বলেছিলেন ওই বক্তা

ওই বক্তা বলেছেন, ‘যদি মোদিকে আসতে দেয়া হয়, তাহলে আমরা সবাই সন্ত্রাসে পরিণত হব। বাংলা হবে আফগান, আমরা হব তালেবান।

‘আমরা ওসামা বিন লাদেনের মতো হুংকার দিয়ে উঠব। আমরা কোনো বাধা মানব না। আমরা রাসুলসেনা, ভয় করি না বুলেট বোমা।…বুলেট বোমাকে ভয় করি না আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘হে মুসলমান ভাইয়েরা, তোমাদের পেছনে সবচেয়ে বড় ব্যাকআপ আছে আল্লাহ রাসুল। আল্লাহ আমাদের পক্ষে আছেন। সুতরাং আমরা বলতে চাই, কোনো বাধা মানা যাবে না। ইসলামের স্বার্থে আল কোরআনের স্বার্থে আলেম ওলামার স্বার্থে দেশের স্বার্থে আমরা সবাই ঐক্য হয়ে লড়ব।’

এমন বক্তব্য আগেও এসেছে

আফগানিস্তানে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের অংশগ্রহণে তালেবান জঙ্গিরা বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। ৯০ দশকের শেষ দিকে তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাও দখল করে নেয়।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলার পর আফগানিস্তানে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান দেশটি। সে সময়ও কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলের নেতারা ‘আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান’ স্লোগান দিয়ে সভা সমাবেশ করে।

সে সময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের নেতা ফজলুল হক আমিনী পল্টন ময়দানে হাতে তলোয়ার নিয়ে উপস্থিত হয়ে এই স্লোগান দেন। তবে তালেবান জঙ্গিরা পরে কোণঠাসা হয়ে গেলে কওমিপন্থিরা আর এই বিষয়টি নিয়ে আগায়নি।

তবে সম্প্রতি তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সমঝোতায় আসার পর বাংলাদেশে কওমিপন্থিরা আবার প্রকাশ্যে তালেবানদের প্রশংসা করা শুরু করেছে।

এ বিভাগের আরো খবর