অপরাধীর খোঁজে ছুটে বেড়ায় পুলিশ। সেই পুলিশ সদস্যদেরই বোকা বানিয়ে এক প্রতারক হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
শুক্রবার রাতে তাকে মগবাজার বিটিসিএল কলোনীর মসজিদ গেটের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার নাম জাকির হোসেন। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বিজয়নগরে। তার কাছ থেকে ৫০০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
ডিবির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকশিনার (এডিসি) মাহবুবুল হক সজীব নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, জাকির প্রচণ্ড ধূর্ত এবং পেশাদার প্রতারক। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদকসহ ১১টি মামলা রয়েছে। এর আগেও জাকির তিনবার গ্রেপ্তার হন। প্রতিবারই জামিনে বের হয়ে আবার পুরোনো পেশায় ফিরে যান। পুলিশ, চিকিৎসক, ব্যাংকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণীর পেশাজীবীরা তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
যেভাবে ফাঁদে ফেলতেন জাকির
জাকির হোসেন নিজেকে ডিআইজি, এআইজি, ইন্সপেক্টর এসব পরিচয়ে পুলিশের সদস্যদের ফোন করতেন। বিশ্বাস অর্জনে পুলিশের নতুন মোবাইল নম্বর যে সিরিজের তার সঙ্গে মিল রেখে একটি নম্বর কিনে নিতেন।
ডিবির তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, জাকির কল করে পুলিশ সদস্যদের কাছে নিজেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিতেন। বলতেন, আপনার ফোন নম্বরটি রেজিস্ট্রার্ড নয়। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন করে দেবে। টার্গেট করা পুলিশ সদস্য রাজি হলে জাকির তার পরিকল্পনা মতো এগোতে থাকেন। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার অংশ বলে পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে নিজের একটি এবং নিকট আত্বীয়ের একটি নম্বর নিতেন জাকির। এরপর পুলিশ সদস্যকে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা ডায়েল করতে বলা হতো। সেভাবে ডায়েল করার পর টার্গেট করা পুলিশ সদস্যের নম্বরটি জাকিরের নম্বরে ফরওয়ার্ড হয়ে যেত।
পুলিশ সদস্যের মোবাইল নম্বরটি নিজের নম্বরে ফরওয়ার্ড করে নেয়ার পর শুরু হতো জাকিরের পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, টার্গেট করা পুলিশ সদস্যের মোবাইল নম্বর রেজিস্ট্রেশনের নামে নিকটাত্বীয়ের যে নম্বরটি জাকির নিয়েছিলেন, সেখানে ফোন করতেন। বলতেন, পুলিশ সদস্য অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন। তাকে জরুরিভিত্তিতে ঢাকা নেয়া হচ্ছে। খরচ বাবদ ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। টাকাটা দ্রুত পাঠাতে বলা হয়। এরপর স্বভাবতই ওই আত্মীয় (বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্ত্রী বা মা-বাবা) পুলিশ সদস্যকে ফোন করেন। কিন্তু তার নম্বরটি জাকিরের নম্বরে ফরওয়ার্ড করা থাকায় কল যায় জাকিরের কাছে। কলটি ধরে জাকির বলেন, উনি ফোন ধরার মতো অবস্থায় নেই। দ্রুত টাকা পাঠান।
এডিসি সজীব বলেন, এ ধরনের জরুরি পরিস্থিতি জানার পর অনেকেই টাকা পাঠিয়ে দিতেন। যদিও অল্প সময়ের মধ্যেই তারা বুঝতে পারতেন, প্রতারিত হয়েছেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, জাকিরের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বিজয়নগরের চর ইসলামপুর। জায়গাটি দুৰ্গম হওয়ায় এটি জাকিরের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কাজ করত। স্থানীয় লোকজনকে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করায় এলাকায় তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল। জাকিরের যেকোনো বিপদে আশ্রয় দিতেন এলাকাবাসী।