সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের অনুসারীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। সেখানে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনারও দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনের পর প্রেস ক্লাবের সামন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। সেটি পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক ডা. মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায় বলেন, শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁওয়ের ঝুমন দাস আপনের ফেসবুক পোস্ট যদি এতই আপত্তিকর ও অবমাননাকর হয়, তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেত। কিন্তু আইনকে তোয়াক্কা না করে স্থানীয় মসজিদের মাইক ব্যবহার করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় পুলিশ যথেষ্ট সময় পেলেও যথাসময়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়নি। উপরন্তু কথিত হিন্দু যুবক ঝুমন দাস আপনকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই গ্রেপ্তার করেছে। পরে কারা হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশবাসী যেদিন জাতির পিতার জন্মদিন উদ্যাপন করছে, ঠিক সেদিনই ধর্মান্ধ উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী নিরীহ হিন্দু গ্রামবাসীর ওপর নির্বিচার তাণ্ডববলীলা চালিয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি ও মন্দির ভাঙচুর করেছে এবং লুটপাট করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুধু গুজব ছড়িয়ে এসব আক্রমণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। সেসব গুজবকারী কাউকে আজ অবদি আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। এ ঘটনায় বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট এবং সমগ্র হিন্দুসমাজ, দেশবাসী মর্মাহত ও বিক্ষুব্ধ।
বক্তারা বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব জন্মশতবর্ষপূতির প্রাক্কালে নোয়াগাঁও গ্রামে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর এহেন বর্বরোচিত এ হামলায় দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও মর্মাহত ও বিক্ষুব্ধ। সেদিন ৮৮টি হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি, আটটি মন্দির ও আসবাব ভাঙচুর, লুটপাট এবং নারীদের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। মসজিদের মাইকে হামলা চালানোর উসকানি দেয়া হয়।’
বক্তারা আরও বলেন, এর আগে যশোরের অভয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোরবানপুর, রংপুরের ঠাকুরপাড়া, দিনাজপুরের চিরিরবন্ধর, পাবনার সাঁথিয়া, টাঙ্গাইলের মধুখালী, ভোলার বোরহানউদ্দীন, কক্সবাজারের রামুসহ অনেক জায়গায় একই কায়দায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের মারধর, বাড়িঘরর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে।
‘ধারাবাহিকভাবে সংগঠিত এ ধরনের ন্যক্কারজনক ফৌজদারি অপরাধের একটিরও বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি। এসব ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় না এনে উল্টো সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়কেই এসব ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
১৫ মার্চ হেফাজত ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হক সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে সমাবেশে ‘সম্প্রদায়িক উসকানিমূলক’ বক্তব্য দেন। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস ফেসবুকে সমালোচনামূলক পোস্ট দেন। এর জেরে ১৭ মার্চ গ্রামটিতে তাণ্ডব চালানো হয়।
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ড. সোনালী দাসের নেতৃত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহসভাপতি তপন কুমার হাওলাদার ও বিশ্বম্বর কুমার নাথ, মিঠু রঞ্জন দে, সাধন মণ্ডল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার বিশ্বাস ও সুশীল মিত্র, সহসাংগঠিক সম্পাদক সুমন দাস, দপ্তর সম্পাদক দীপংকর ব্যাপারীসহ অনেকে।