প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। নবায়ন করা হয়েছে পাঁচটির মেয়াদ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুই সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে দুই দেশের যুব উন্নয়নবিষয়ক একটি এমওইউ স্বাক্ষর হয়।
এতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। আর শ্রীলঙ্কার পক্ষে ছিলেন পল্লী আবাসন প্রতিমন্ত্রী ইন্দিকা আনুরুদ্ধ।
এ ছাড়াও দুই সরকারপ্রধানের বৈঠকে ৫টি এমওইউ নবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ও শ্রীলঙ্কার কাউন্সিল ফর এগ্রিকালচার রিসার্চ পলিসির মধ্যে সমঝোতায় সই করেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও হস্তশিল্প প্রতিমন্ত্রী দায়াসিরি জায়াসেকারা।
দুই দেশের মধ্যে চলমান কারিগরি শিক্ষাবিষয়ক সমঝোতায় সই করেন বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও শ্রীলঙ্কার শিক্ষামন্ত্রী জিএল পিরিস।
শ্রীলঙ্কায় চলমান বাংলাদেশি নার্সদের প্রশিক্ষণবিষয়ক সমঝোতা নবায়নে সই করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও দেশটির অর্থ ও শেয়ারবাজারবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আজিথ নিওয়ারড কাবলার।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ ও লক্ষ্ণণ কাদিরগামার ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মধ্যে সহায়তা বিষয়ে সমঝোতায় সই করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও দেশটির আঞ্চলিক সহায়তাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তারক বালসুরিয়া।
দুই দেশের মধ্যে সংস্কৃতি বিনিময়বিষয়ক একটি সমঝোতাও নবায়ন করা হয়। এতে সই করেন সংস্কৃতি সচিব এম বদরুল আরেফিন ও দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সচিব গামিনি সেদারা সেনারাথ।
রাজপাকসে বেলা পৌনে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান শেখ হাসিনা। এ সময় একটি একান্ত বৈঠক করেন দুই নেতা। পরে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক।
তার আগে সকাল ১০টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। পরে তার স্মৃতি বিজড়িত জাদুঘর পরিদর্শন করেন তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে যোগ দিতে শুক্রবার সকালে ঢাকায় আসেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে দুই দিনের ঢাকা সফরে আসেন শ্রীলঙ্কার সরকারপ্রধান।
তার সফরে সঙ্গী হয়েছেন দেশটির শিক্ষামন্ত্রী, আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রতিমন্ত্রী, তাঁত ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী, গ্রামীণ গৃহায়ণ ও গৃহনির্মাণ সামগ্রী শিল্প প্রতিমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ২৮ জন।
সফরের প্রথম দিন শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী।
এরপর সন্ধ্যায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বলরুমে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের সম্মানে নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপন হয়। বন্ধুত্বপূর্ণ এ সম্পর্ক বর্তমান সরকারের মেয়াদে আরও সুদৃঢ় ও সম্প্রসারণ হয়।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক ও সহযোগিতার আরও ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে আশা করছে বিভিন্ন মহল।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০ দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এই ১০ দিনের মধ্যে ২২ মার্চ নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারী, ২৪ মার্চ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং এবং ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থাকবেন।
এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও এ উদযাপন উপলক্ষে ভিডিও বক্তব্য দেন।
দুই দিনের ঢাকা সফরে এসে ১৭ মার্চ উদ্বোধনী আয়োজনে যোগ দিয়েছিলেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সোলিহ।