নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মানিকপুর গ্রামে বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত হলেন বরেণ্য রাজনীতিবিদ মওদুদ আহমদ ।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় মানিকপুর গ্রামে নিজ বাড়ির সামনে পঞ্চম জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমদ ও মা বেগম আম্বিয়া খাতুনের কবরের পাশে দাফন করা হয় নোয়াখালীর এই কৃতি সন্তানকে।
এর আগে ঢাকায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে সকাল ১০টায় তার প্রথম জানাজা হয়। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় জানাজা হয়।
ঢাকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে হেলিকপ্টারযোগে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মরদেহ নোয়াখালীর কবিরহাট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয়।
বাদ জুম্মা কবিরহাট সরকারি কলেজ মাঠে তৃতীয় জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বসুরহাটে। বসুরহাট সরকারি মুজিব কলেজ মাঠে বিকেল ৪টায় চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
কবিরহাট সরকারি কলেজ মাঠে মওদুদ আহমদের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: নিউজবাংলা
কবিরহাটের জানাজায় নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো.শাহজাহান, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য তাবিথ আউয়াল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দারসহ দলীয় নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেন।
এ সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় সকলের কাছে দোয়া চেয়ে বক্তব্য রাখেন মওদুদ আহমদের স্ত্রী হাসনা মওদুদ।
বসুরহাটের জানাজায় কেন্দ্রীয় বিএনপি ও জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান রিপনসহ দলীয় নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুর আগে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে গেছেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী পরিবারের পক্ষ থেকে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা বিএনপি ও জামায়াতের শোক :
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে জেলা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও বেগমগঞ্জ আসনের সাবেক সাংসদ বরকত উল্যা বুলু, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সাংসদ মো. শাহাজাহান, জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান এবং ছাত্রদলের সভাপতি আজগরউদ্দিন দুঃখ গভীর শোক প্রকাশ করেন।
এক শোকবার্তায় তারা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
এদিকে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আলাউদ্দিন, সেক্রেটারি মাওলানা নিজাম উদ্দিন ফারুক, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন, সেক্রেটারি মাওলানা মোশারেফ হোসেন মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এক বিবৃতিতে তারা বলেন, মরহুমকে মানুষ হিসেবে জীবনের ভুলগুলো ক্ষমা করে নেক কাজগুলো কবুল করার জন্য এবং তাকে জান্নাতুল ফেরদাউসের বাসিন্দা করার জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি।
এ সময় তারা শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
কাদের মির্জার তিন দিনের শোক ঘোষণা :
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে বসুরহাট পৌরসভার পক্ষ থেকে তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছেন পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা।
কাদের মির্জা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, ‘কোম্পানীগঞ্জের কৃতি সন্তান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। উনার মুত্যুতে তিনদিনের শোক ঘোষণা করা হইল।’
এ ছাড়া ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বসুরহাট পৌরসভার প্রবেশমুখে তোরণ নির্মাণ করেন তিনি।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানিকপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে মওদুদ আহমদ চতুর্থ।
১৬ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ৮১ বছর বয়সী মওদুদ কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন।