ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন ঠেকাতেই সুনামগঞ্জের শাল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে যোগ দিতে চারটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান ঢাকায় আসছেন।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সলিহ ও শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির আসার কথা ২৬ মার্চ।
প্রতিবেশী দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সফর ঠেকাতে একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করেছেন খালিদ মাহমুদ। বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী যাতে বাংলাদেশ সফর আসতে না পারে সেজন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে, দেশে সামপ্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে। এই মহলটি আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়েও ষড়যন্ত্র করছে, যাতে সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়।’
শাল্লার একটি হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামের এক তরুণ গত মঙ্গলবার হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তাতে মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতার অভিযোগ আনা হয়।
এর আগে ১৫ মার্চ শাল্লার পাশের দিরাইয়ে সমাবেশ করে হেফাজত। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা মামুনুল ওই সমাবেশে বক্তব্য দেন। পরদিনই নোয়াগাঁও গ্রামের ওই তরুণের স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে।
মঙ্গলবার রাত থেকেই ওই স্ট্যাটাস নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকালে এলাকায় বিক্ষোভের ঘোষণা দেয় হেফাজত।
উত্তেজনা আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা ফেসবুকে পোস্ট দেয়া তরুণকে মঙ্গলবার রাতেই পুলিশের হাতে তুলে দেন।
বুধবার সকালে কয়েক হাজার মানুষ দা-লাঠিসহ নোয়াগাঁও গ্রামে মিছিল নিয়ে এসে ভাঙচুর করে ৮৭টি হিন্দু বাড়ি। এসব বাড়িঘর থেকে লুটে নিয়ে যায় টাকাপয়সা-স্বর্ণালংকার।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আর আতঙ্ক সত্ত্বেও ওই গ্রামের নিরাপত্তায় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ ছিল না; ছিল না পুলিশের বাড়তি নজরদারি।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, হেফাজত নেতাদের আশ্বাসে বিশ্বাস রেখে এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে পুলিশ সব সময় সতর্ক ছিল।
গ্রামটিতে হেফাজতের কর্মী-সমর্থকদের হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের করা একটি মামলায় ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর পুলিশের করা অপর মামলায় দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের সবাইকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে দেখানো হয়েছে।
হামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শাল্লার ওই গ্রামের এমন হামলায় দেশজুড়ে সমালোচনা হচ্ছে। এই ঘটনায় জড়িতদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: নিউজবাংলা
এ হামলাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে নৌ পরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ’উন্নিশ পঁচাত্তরে সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে এই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, যা এখন চলছে। এই ষড়যন্ত্রকারীরা পদ্মাসেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে, সরকারের পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে এবং সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করোনা মোকাবিলার সাফল্য নিয়েও ষড়যন্ত্র করতে বাদ রাখেনি।’
ঢাকা সাব-এডিটর কাউন্সিল আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্যান্টাগন ইন্টারন্যাশনাল লিমিডেটের ব্যাপস্থাপনা পরিচালক অন্ত করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক আব্দুল মোমেন মিল্টন, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি মামুন ফরাজী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাসানসহ অনেকে।