বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফুল আর অশ্রুতে মওদুদের বিদায়

  •    
  • ১৯ মার্চ, ২০২১ ১৩:৪১

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধান বিচারপতি। এরপর একে একে তার সহকর্মী আইনজীবীরা শেষ বিদায় জানান। আইনাঙ্গনে ৫৩ বছরের স্মৃতি রেখে চিরদিনের জন্য চলে গেলেন মওদুদ আহমদ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে তার সহকর্মীরা ফুলেল শ্রদ্ধা আর অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় জানিয়েছেন।সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধান বিচারপতি। এরপর একে একে তার সহকর্মী আইনজীবীরা শেষ বিদায় জানান। আইনাঙ্গনে ৫৩ বছরের স্মৃতি রেখে চিরদিনের জন্য চলে গেলেন মওদুদ আহমদ।সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে শুক্রবার সকাল ১০টায় তার প্রথম জানাজা হয়। জানাজায় অংশ নেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি সৈয়দ জিয়াউল করিম, বিচারপতি মো. মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, রাগীব রউফ চৌধুরী, একেএম এহসানুর রহমানসহ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরা। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ আইনজীবীসহ তার অসংখ্য গুণগ্রাহী জানাজায় অংশ নেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা

জানাজা শেষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আইনজীবীসহ তার সহকর্মীরা। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। অশ্রুসিক্ত নয়নে ফুল দিয়ে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

জানাজা শেষে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘ব্যারিস্টার মওদুদের সঙ্গে রাজনৈতিক মত এবং পথের পার্থক্য আমাদের ছিল। তিনি দেশের একজন সিনিয়র নাগরিক। তিনি প্রখ্যাত আইনজীবী ও একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। সর্বোপরি বিভিন্ন লেখায় তিনি ইতিহাসের অনেক সত্য উল্লেখ করেছেন।আমি মনে করি তিনি ব্যক্তিগত জীবনে একজন সফল মানুষ ও প্রখ্যাত আইনজীবী ছিলেন। আইন অঙ্গনের মানুষ হিসেবে তার লেখনির মধ্য দিয়ে চিরকালই তার পরিচিতি থেকে যাবে।’প্রথম জানাজা শেষে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। বেলা ১১টায় জানাজা শেষ হয়।জানাজা শেষে প্রিয় নেতার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুক্রবার সকালে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ছবি: সাইফুল ইসলাম

তার আগে সকাল ৯টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মওদুদ আহমদের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাগপার একাংশের সভাপতি লুৎফর রহমান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মস্তফা জামাল হায়দারসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মৃত্যু হয় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং বুকে ব্যথা অনুভব করলে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর মওদুদকে ঢাকায় এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার হার্টে ব্লক ধরা পড়ায় হৃদযন্ত্রে স্থায়ী পেসমেকার বসানো হয়। এছাড়া কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।

এ বছরের ২০ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে বাসায় নেয়ার পরদিনই তাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশ ছাড়েন। সেখানে দীর্ঘদিন আইসোলেশনে থেকে পরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও উপ-রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল থেকে মওদুদের মরদেহ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশে পৌঁছায়। তার মরদেহ গ্রহণ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ অনেক নেতা।

ঢাকার বাসায় নেয়া হয় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের মরদেহ। ছবি: নিউজবাংলা

নয়াপল্টনের জানাজা শেষে অ্যাম্বুলেন্সে মওদুদ আহমদের কফিন নেয়া হচ্ছে তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানিকপুরে।

বাদ আসর কোম্পানীগঞ্জ সরকারি কলেজমাঠে জানাজার পর নিজ বাড়ির আঙিনায় আরেক দফা জানাজা হবে। পরে মওদুদ আহমদের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হবে।

১৯৪০ সালের ২৪মে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন মওদুদ আহমদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ করে তিনি যুক্তরাজ্যে ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল ডিগ্রি নেন। পরে দেশে ফিরে যুক্ত হন আইন পেশায়। কবি জসীম উদ্‌দীনের জামাতা ব্যারিস্টার মওদুদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মপক্ষ সমর্থন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে প্রথম পোস্ট মাস্টার জেনারেল করা হয়।

এক সাক্ষাৎকারে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেছেন, ‘যখন লন্ডনে লেখাপড়া করতাম, তখনই স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান আন্দোলন শুরু করেছিলাম। পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে, শোষণ করেছে তারই প্রতিবাদে আমাদের এ আন্দোলন ছিল। সে কারণে সেখানে আমরা পূর্ব পাকিস্তান হাউস বলে একটি ভবনও ক্রয় করেছিলাম। সেটিই বেগ্রাউন্ড হিসেবে কাজ করেছে। এরপর দেশে ফিরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসি।’

ভাইকে হারিয়ে বিলাপ করছেন মওদুদ আহমেদের বোন মাহফুজা আহমেদ। ছবি: সাইফুল ইসলাম

১৯৬৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি আইনজীবী হিসেবে অন্তুর্ভুক্ত হন। এরপর ১৯৬৮ সালের ৬ এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হন।পরে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৯ সালে জন্মস্থান নোয়াখালীতে প্রথমবার এমপি হন। জিয়াউর রহমানের সরকারে মন্ত্রী ও পরে উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

জিয়ার মৃত্যুর পর মওদুদ সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাত ধরেন। এরশাদের ৯ বছরের শাসনামলে তিনি মন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন। এরশাদ সরকারের পতনের পরও জাতীয় পার্টিতেই ছিলেন মওদুদ। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি বিএনপিতে ফেরেন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে তিনি আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত মওদুদ আইন ও সমকালীন রাজনীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন। স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা, বাংলাদেশ: শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ- প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশের রাজনীতি ও সামরিক শাসন, এ স্টাডি অব দ্য ডেমোক্রেটিক রেজিমস, কারাগারে কেমন ছিলাম, বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড আফটারম্যাথ ২০০৭-২০০৮ তার উল্লেখযোগ্য বই।

এ বিভাগের আরো খবর