বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শাল্লায় হিন্দু গ্রামে হামলার বিচার দাবি

  •    
  • ১৯ মার্চ, ২০২১ ১২:৩০

হিন্দুদের ওপর প্রতিনিয়ত অত্যাচার হচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সভাপতি দীপংকর শিকদার দিপু বলেন, ‘আমাদের ওপর এভাবে দলবেঁধে হামলা করেছে। বাড়িঘর ভাঙচুর, নারীদের শ্লীলতাহানি, লুটপাটসহ যা খুশি তা করে যাচ্ছে। আমারা দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ, আমরা শান্তিতে থাকতে চাই।’

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বক্তারা জানান, দেশে সংখ্যালঘুদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট ও বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের পৃথক দুটি মানবন্ধনে শাল্লায় এ হামলাকে নারকীয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

সংগঠন দুটির নেতাদের দাবি, একটা মৌলবাদী গোষ্ঠীর এই হামলার উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করা।

হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামটির এক তরুণ গত মঙ্গলবার হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তাতে মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতার অভিযোগ আনা হয়।

১৫ মার্চ শাল্লার পাশের দিরাইয়ে সমাবেশ করে হেফাজত। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা মামুনুল ওই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। পরদিনই নোয়াগাঁও গ্রামের ওই তরুণের স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে।

মঙ্গলবার রাত থেকেই ওই স্ট্যাটাস নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকালে এলাকায় বিক্ষোভের ঘোষণা দেয় হেফাজত।

উত্তেজনা আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা ফেসবুকে পোস্ট দেয়া তরুণকে মঙ্গলবার রাতেই পুলিশের হাতে তুলে দেন।

বুধবার সকালে কয়েক হাজার মানুষ দা-লাঠিসহ নোয়াগাঁও গ্রামে মিছিল নিয়ে এসে ভাঙচুর করে ৮৭টি হিন্দু বাড়ি। এসব বাড়িঘর থেকে লুটে নিয়ে যায় টাকাপয়সা-স্বর্ণালংকার।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আর আতঙ্ক সত্ত্বেও ওই গ্রামের নিরাপত্তায় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ ছিল না; ছিল না পুলিশের বাড়তি নজরদারি।

হামলার পর ঘর ছেড়ে হাওরে আশ্রয় নেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ছবি: নিউজবাংলা

স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, হেফাজত নেতাদের আশ্বাসে বিশ্বাস রেখে এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে পুলিশ সব সময় সতর্ক ছিল।

গ্রামটিতে হেফাজতের কর্মী-সমর্থকদের হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের করা একটি মামলায় ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর পুলিশের করা অপর মামলায় দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের সবাইকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে দেখানো হয়েছে।

হামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সভাপতি দীপংকর শিকদার দিপু বলেন, ‘এটি একটি নারকীয় ঘটনা। দেশের এই সময়ে এই ঘটনা লজ্জার। দেশের হিন্দু সম্প্রদায় মৌলবাদ দ্বারা বিভিন্নভাবে অত্যাচারিত হচ্ছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমাদের।’

হিন্দুদের ওপর প্রতিনিয়ত অত্যাচার হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর এভাবে দলবেঁধে হামলা করেছে। বাড়িঘর ভাঙচুর, নারীদের শ্লীলতাহানি, লুটপাটসহ যা খুশি তা করে যাচ্ছে। আমারা দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ, আমরা শান্তিতে থাকতে চাই।’

কয়েক হাজার মানুষ দা-লাঠিসহ মিছিল নিয়ে এসে ভাঙচুর করে ৮৭টি হিন্দু বাড়ি। ছবি: নিউজবাংলা

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজন কুমার মিশ্র বলেন, ‘প্রতিনিয়ত সাম্প্রদায়িক হামলা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। দেশ ক্রমান্বয়ে সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠেছে।

‘জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের দিনে দলবেঁধে সাম্প্রদায়িক হামলা, দেশত্যাগে ভয়ভীতি প্রদর্শন, বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতনসহ যেসব অত্যাচার চলছে তা বন্ধের দাবি জানাই। সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার মোতাবেক সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের নিশ্চিত আহ্বান করছি।’

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি দ্বীনবন্ধু মিত্র বলেন, ‘১৫ বছর ধরে হিন্দু নির্যাতনের কারণে কাউকে শাস্তি দেয়া হয়নি। এর আগে চট্টগ্রামের রাউজানে, কক্সবাজারের রামু, নাসিরনগর, যশোরের অভয়নগরসহ একের পর এক ঘটনা ঘটছে৷ এতকিছুর পর সরকার নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।’

হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানবন্ধন। ছবি: নিউজবাংলা

মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, ‘মাইকে ঘোষণা দিয়ে এতবড় হামলা হয়েছে। ঘোষণা দেয়ার সময় পুলিশের কোনো ভূমিকা ছিল না। তারা নিশ্চুপ ছিল। এভাবে মৌলবাদী ভয় দেখিয়ে হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করে ইসলামিক রাষ্ট্র বানাতে চাচ্ছে।’

দুই সংগঠন থেকেই হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি করা হয়। সুনামগঞ্জের ভিকটিমদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর