‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থে ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় সবার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটেছে উল্লেখ করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, তাদের অপরাধ অমার্জনীয়, কিন্তু বিষয়টি নিয়ে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাওয়ায় এবং বইটি ধ্বংস করায় তাদের সতর্ক করে আবেদনটি নিষ্পত্তি করা হলো।
আদালত বলেছে, প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থে ইতিহাস বিকৃতি করে তারা যে অপরাধ করেছিল, পরে ভুল সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ঐকান্তিক ও আপ্রাণ প্রচেষ্টার কারণে তাদের অপরাধ ম্লান হয়ে গেছে।
পরে তাদের সতর্ক করে আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দেয় আদালত।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।
আদালতে রিটকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মইনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু।
বইটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। উপদেষ্টা ও সম্পাদনা নামে দুটি কমিটিও গঠন করা হয়। ওই কমিটি দুটি পাণ্ডুলিপি চূড়ান্তের পর গ্রন্থটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়। প্রকাশনার পরপরই বেশ কিছু গুরুতর ত্রুটি নজরে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর তাৎক্ষণিকভাবে গ্রন্থটির বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বইটি পর্যালোচনার জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন।
এর মধ্যে ড. কাজী এরতেজা হাসানের রিটের পর ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর রুল জারি করে এ ঘটনা তদন্তে অর্থ সচিবকে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এ আদেশ অনুসারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থ বিভাগ) ড. মো. জাফর উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেন। ...গ্রন্থটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিবৃত রয়েছে। এ কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি খুঁজে পায়নি, এ যুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত না-করার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। গ্রন্থটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না-করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে বলে কমিটি মনে করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘গ্রন্থটিতে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি সংযোজন না করাই শ্রেয় ছিল এবং সেটি সবার ভুল মর্মে বইটির সম্পাদক স্বীকার করেন।’