এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করতে না পারলেও তার মন সেখানে পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনা মহামারির কারণে বৃহস্পতিবার এই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘প্রতিবছরই বইমেলায় যাই। মনটা পড়ে আছে ওখানে।’
এবার বইমেলায় না যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন কোথাও যাই, বিভিন্ন কারণে হাজার খানেক লোক সেখানে যায়। কাজেই রোগটা যেন সংক্রমিত না হয়। তা ছাড়া ছাত্র বা আমাদের সংগঠনের অনেকেই এখানে উপস্থিত হয়ে যান। সে ভিড় বা সমাবেশটা যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে ও মানুষ যাতে সংক্রমিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমি সেখানে উপস্থিত থাকতে পারলাম না।’
‘করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় সবাইকে সাবধানে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মার্চ মাসে আমাদের এ অনুষ্ঠানটা হচ্ছে; যদিও সব সময় ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমেই করা হয়। তবে পয়লা ফেব্রুয়ারি এবার আমরা শুরু করতে পারিনি। করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাবের কারণেই আমাদের এই সময় নিতে হলো।
কারণ যখন টিকাদান শুরু করব, টিকাদান শুরু করার পর আমরা মনে করলাম যে একটু মনে হয় সময় নিয়ে দেখা দরকার কী অবস্থা হয়।
‘যদিও এই মার্চ মাসেই করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। আবার সে প্রাদুর্ভাব একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। এ জন্য সবাইকে আমি বলব, আপনারা একটু সাবধানে থাকবেন। মার্চ মাস কিন্তু আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। আর এই মাসেই বইমেলার অনুষ্ঠান।’
বৃহস্পতিবার মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।এর আগে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। পরে সূচনা সংগীত হিসেবে পরিবেশন করা হয় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি। ভাষা আন্দোলনে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ২০২০ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন মুহাম্মদ সামাদ (কবিতা), ইমতিয়ার শামীম (কথাসাহিত্য), বেগম আকতার কামাল (প্রবন্ধ/গবেষণা), সুরেশরঞ্জন বসাক (অনুবাদ), রবিউল আলম (নাটক), আনজীর লিটন (শিশুসাহিত্য), সাহিদা বেগম (মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা), অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় (বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান), ফেরদৌসী মজুমদার (আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনী) ও মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান (আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনী)।
এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইয়ের ইংরেজি অনুবাদের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে ‘আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ’ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রথম ‘আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়। এ আয়োজন করেছিলেন কথাসাহিত্যিক ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের তৎকালীন পরিচালক সরদার জয়েনউদ্দীন। সেই সময় থেকেই বাংলা একাডেমিতে শুরু হয় বইমেলা।
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাষাশহিদদের স্মরণে ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমি ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এই বইমেলার আয়োজন করে আসছে। কোনো বছরই এই আয়োজনের ব্যতিক্রম ঘটেনি। সারা বিশ্বে মহামারি আকারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে এবারই প্রথম অমর একুশে গ্রন্থমেলা ফেব্রুয়ারি মাসে হয়নি।
এবার দেড় মাস পিছিয়ে বইমেলা শুরু হলো বৃহস্পতিবার। মেলা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে পয়লা বৈশাখ বা ১৪ এপ্রিল। স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় রেখে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বাড়ানো হয়েছে মেলার পরিসর।
এবার একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গা নিয়ে বসছে মেলা। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭ প্রতিষ্ঠানের ১৫৪টি স্টল এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪০৩ প্রতিষ্ঠানকে ৬৮০টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলায় ৩৩টি প্যাভিলিয়ন থাকছে।
এবারও লিটল ম্যাগ চত্বর রাখা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। সেখানে ১৩৫টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি পাঁচটি উন্মুক্ত স্টল দেয়া হয়েছে।
মেলায় একক ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন, তাদের বই বিক্রি ও প্রদর্শনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এবারও শিশুচত্বর দেয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রথম দিকে শিশু প্রহর থাকছে না।
মেলায় প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন থাকবে।