বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তুলতে জাপান সব সময় পাশে আছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা।
বুধবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে এক ভিডিওবার্তায় বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এ কথা বলেন তিনি, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের মূল ভিত্তিই হলো পারস্পারিক সহযোগিতা, বিশ্বাস, নির্ভরশীলতা, সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ। এসবেই দুই দেশের ভিত্তি মজবুত হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে জাপান ‘‘সোনার বাংলা’' ধারণাকে গুরুত্ব দিয়ে তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।'
বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়তে জাপানও এগিয়ে এসেছিল জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পরপরই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। এ জন্য তিনি জাপানের সহায়তা চেয়েছিলেন। আমরা তার আহবানে সাড়া দিয়েছিলাম।’
স্বাধীনতার পরপর বঙ্গবন্ধুর জাপান সফর তুলে ধরে সুগা বলেন, ‘জাপান সফরে গিয়ে জাপানের নগর ও গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। পথে পথে মানুষের সঙ্গে কথা বলে জেনেছিলেন জাপানের বদলে যাওয়ার গল্প। তিনি কৃষি, গবাদি ও মৎস্য খামার ঘুরেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে তিনি জাপানি মডেলে সামনে এগোনোর স্বপ্ন দেখেন। সেবারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি তার সেই ইচ্ছার কথা জানান।’
সুগা বলেন, ‘জাপানের জনগণের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। দুদেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার জন্য তিনি জোরালো উদ্যোগ নিয়েছিলেন। দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক সব সময়ই বন্ধুত্বপূর্ণ। তারা হৃদয় দিয়ে একে অপরকে অনুভব করে। যার প্রমাণ ৫০ বছর আগের ঘূর্ণিঝড় ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে জাপানি শিশুরা ত্রাণ সংগ্রহের জন্য রাস্তায় নেমেছিল। আবার ১০ বছর আগে জাপানে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর ভূমিকম্প ও সুনামিতে বাংলাদেশ উদ্ধারকারী দল ও সাহায্য পাঠিয়েছিল।’
স্বাধীনতার সময় থেকে সোনার বাংলা অর্জনে জাপান সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বলে জানান ইয়োশিহিদে সুগা।
তিনি বলেন, ‘যমুনা সেতু, ১০০ টাকার ব্যাংক নোট, সোনারগাঁও হোটেল স্বাধীনতার পরপরই তৈরি হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এরআরটি বা মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক, হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির মাধ্যমে জাপান তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। এই প্রকল্পগুলো আমাদের দ্য বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ বি) ধারণার অধীনেই এটা করা হচ্ছে। যা আঞ্চলিক কানেকটিভিটির ধারণাই পাল্টে দেবে।’
বাংলাদেশের প্রতি জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রার সঙ্গে আছে জাপান। কেবল তা-ই নয়, এ দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নেও জাপান তার সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। আমি বিশ্বাস করি, জাপানি এই সহযোগিতা বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পর উন্নত দেশ হতেও সহায়তা করবে।
‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারত উপমহাদেশের মাঝখানে বাংলাদেশ অবস্থিত হওয়ায় এবং সাম্প্রতিক উন্নতির কারণে জাপানের কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এই আগ্রহ ভবিষ্যৎ ব্যবসা-বাণিজ্যে অসম্ভবকে সম্ভব করবে।’
সুগা জানান, এই অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা এখন আমাদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ কেবল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াই নয়, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আইনের শাসন ও কানেকটিভিটির ওপর ভিত্তি করে একটি স্বাধীন ও উন্মুক্ত ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হলে এ অঞ্চলের জন্য স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। স্বাধীন ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে জাপান।
তিনি বলেন, ‘২০২২ সালকে জাপান, বাংলাদেশ-জাপান কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর ও অর্থপূর্ণ করে তুলব।’