বঙ্গবন্ধুর অবদান কখনও ভোলার নয় বলে জানিয়েছেন মালদ্বীপের সফররত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ।
বুধবার বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। বক্তব্যের শুরুতেই এই আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানোয় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বলেন, ‘আজকের আয়োজনে আমন্ত্রণ পাওয়ায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।’
তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শেখ মুজিবুর রহমান অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। বঙ্গবন্ধু বা বাংলার বন্ধু নামে পরিচিত বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে একজন বড় মাপের ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলাদেশকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু আজীবন রাজনৈতিক মুক্তি ও গণতন্ত্রের পক্ষে আপসহীন দূত হিসেবে কাজ করে গেছেন। তার ছয় দফা স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি রচনা করে গেছে। তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃত। দুঃখজনকভাবে মৃত্যু হলেও তার অবদান কখনও ভোলার নয়। মুক্তি ও গণতন্ত্রকামী প্রতিটি হৃদয়ে তিনি অমর হয়ে থাকবেন।
এ সময় বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানান তিনি।
ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ বলেন, সাম্প্রতিক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি অসাধারণ। দেশের নেতৃত্বের সঠিক নির্দেশনা এবং দেশের মানুষের কঠোর পরিশ্রম এ দেশের অর্থনীতিকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে গিয়েছে।
করোনার মধ্যে এ দেশে অবস্থান করা মালদ্বীপের নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেবা দেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি। ইব্রাহিম বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে আমরা এখন একটি অন্য রকম সময় পার করছি। বাংলাদেশ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া পিপিই এবং স্বাস্থ্যসামগ্রীর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। সম্প্রতি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর স্বাস্থ্যকর্মীদের মালদ্বীপে স্বাস্থ্য সহায়তার জন্য পাঠিয়ে বাংলাদেশ সরকারের উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছে। গত বছর একটি মেডিক্যাল দল মালদ্বীপ সফর করে। এই সিদ্ধান্তের জন্য মালদ্বীপ কৃতজ্ঞ। দুই দেশের সুসম্পর্কের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত সহযোগিতাপূর্ণ। আমরা আপনাদের মানবসম্পদ খাতের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাত।’
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটগুলোও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে গুরুত্ব পায়। তিনি বলেন, ভারত মহাসাগরসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানের কারণে দুই দেশের ওপরই জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাব পড়ছে। প্রতি বছর বর্ষায় অতি বৃষ্টি থেকে সৃষ্ট বন্যায় বাংলাদেশে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের করুণ পরিণতির কথাই মনে করিয়ে দেয়।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে মালদ্বীপ বাংলাদেশকে সমর্থন করে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি প্রশমনে ভবিষ্যতেও আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করব।’
মালদ্বীপে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। বলেন, ‘বর্তমানে মালদ্বীপে প্রবাসী কর্মীদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া। আমাদের দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। আমি এটুকু নিশ্চিত করতে পারি, আমার সরকার মালদ্বীপে থাকা প্রত্যেক প্রবাসী কর্মীর অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক প্রবাসী কর্মীকে দেশ বা সামাজিক মর্যাদার ঊর্ধ্বে রেখে বিনা মূল্যে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনার মধ্য দিয়ে আমার সরকারের সদিচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে। এই মহামারির সময় নাগরিক ও বিদেশিদের মধ্যে সরকার কোনো বৈষম্য করেনি।’
বক্তব্য শেষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মালদ্বীপ সফরের আমন্ত্রণও জানান ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ।