কিছু সুবিধাবাদী লোকের কারণে রাজনীতি এখন উল্টো পথে হাঁটছে বলে আক্ষেপ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বাংলাদেশ ৫০ বছরে যতটা এগিয়েছে, রাজনীতিতে সেভাবে গুণগত পরিবর্তন হয়েছে কি না এই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বুধবার বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আজ আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করছি। এ সময়ে রাজনীতিতে অনেক চড়াই-উতরাই ঘটেছে। কিন্তু রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন কতটুকু হয়েছে তা ভেবে দেখতে হবে। ব্যক্তির চেয়ে দল, দলের চেয়ে দেশ বড়- এটাই হচ্ছে রাজনীতির মূল আদর্শ। কিন্তু আজকাল যেন রাজনীতি উল্টো পথে হাঁটছে।
‘কিছু সুবিধাবাদী লোক রাজনীতিটাকে পেশা বানিয়ে ফেলেছেন। রাজনীতি আর পেশা এক জিনিস নয়। পেশার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের ও পরিবার-পরিজনের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। আর রাজনীতি হচ্ছে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার একটি মহান ক্ষেত্র। তাই রাজনীতিকে পেশা মনে করলে দেশ ও জনগণের কথা ভুলে নিজের ও পরিবারের গণ্ডির মধ্যেই ঘুরপাক খেতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মদিনে রাজনীতিবিদদের আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আসুন, বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের দেশ ও জনগণের সেবায় নিয়োজিত করি।’
এই আয়োজনে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা ভিডিওবার্তা পাঠানোয় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, এখন থেকে এসব উন্নয়ন সহযোগী বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ও সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ ও সুদৃঢ় হবে। আমি চীন, জাপান ও কানাডার সরকার ও জনগণের অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করি।’
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ঐতিহাসিক এই উদযাপনে যোগ দিতে সময় নিয়ে বাংলাদেশে আসায় মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি মালদ্বীপের মাননীয় রাষ্ট্রপতির মূল্যবান বক্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতীয়মান হয়। আমি আশা করি, আমাদের সঙ্গের এই সময়টুকু আপনার জন্য আনন্দদায়ক এবং উপভোগ্য হবে। আমি মালদ্বীপের জনগণের অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।’
রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে উঠে আসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম, বেড়ে ওঠা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, আত্মত্যাগ, জাতির কর্ণধার হয়ে ওঠার নানা প্রসঙ্গ।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম ত্যাগ ও অসীম সাহসিকতার কথা সুবিদিত হয়ে থাকবে।
‘শতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার অমূল্য স্মৃতি ও স্মারক সংরক্ষণ করতে হবে। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঙালি জাতির গৌরব এবং পূর্বসূরিদের অসীম সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের অনন্য গাথা জানতে পারে এবং সেই আলোকে নিজেদের আলোকিত করতে পারে।’
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতির পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কথাও স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি। বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) সব সময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন।’
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ অর্জন করেছে।’
‘আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান’ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাস্তবায়িত হচ্ছে মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বহু মেগা প্রকল্প। টেকসই উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ।’