বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যেভাবে বঙ্গবন্ধু অবিসংবাদী নেতা

  •    
  • ১৭ মার্চ, ২০২১ ১৫:০৬

রাজনৈতিক জীবনের বেশির ভাগ সময় তার কারাগারে কেটেছে, যখন অন্য নেতারা কারাবরণ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছেন। তবে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তাকে জাতির পিতায় পরিণত করেছে।

১৯৫৪ সালে শেখ মুজিব যখন যুক্তফ্রন্টের হয়ে প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তখন পূর্ব পাকিস্তানের তিন বড় নেতা ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী ও আবুল কাশেম ফজলুল হক। এমনকি আতাউর রহমান খানও ছিলেন মুজিবের চেয়ে বড় নেতা। কিন্তু এর ১৬ বছর পর ১৯৭০-এর নির্বাচনের সময় শেখ মুজিব বাংলার অবিসংবাদিত নেতা। তার ধারেকাছে কেউ নেই।

কীভাবে অল্প সময়ের মধ্যে এত নেতার ভিড়ে মহিরুহ হয়ে উঠলেন টুঙ্গিপাড়া থেকে আসা একটি গ্রামের ছেলে? কোনগুলো ছিল তার রাজনৈতিক উত্থানের মোড় ফেরানো ঘটনা? সেটা কি ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু? ফজলুল হক ও মওলানা ভাসানীর দোদুল্যমানতা?

বিশ্লেষকরা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর অদম্য সাহস আর প্রতিকূলতার মধ্যেও অটল থাকার ক্ষমতা তাকে সবচেয়ে আস্থাজনক নেতায় পরিণত করেছে। রাজনৈতিক জীবনের বেশির ভাগ সময় তার কারাগারে কেটেছে, যখন অন্য নেতারা কারাবরণ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু যে জিনিসটা তাকে বাঙালির জাতির পিতা করে তুলেছে, সেটি তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই তিনি বাঙালির একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। এটার জন্য তিনি কাজ করেছেন। নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। সেই সঙ্গে প্রস্তুত করেছেন পুরো জাতিকে।

এক নিরাপত্তাকর্মীকে খাবারের জন্য ধরে বাড়ির ভেতর নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণাকারী আবু আহসান মো. সামসুল আরেফিন সিদ্দিক নিউজবাংলাকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাহস ও প্রচেষ্টা তাকে সবার থেকে অনন্য করেছে। উনি বারবার সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সেটা মোকাবিলা করেছেন।

ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধু লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন আর সেই লক্ষ্যের পথে এগিয়েছেন। কখনও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। তিনি ছিলেন অদম্য সাহসী। তিনি কখনও অপশক্তির সঙ্গে আপস করেননি।

একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে। ছবি: মুজিব ১০০

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘ওনার সমসাময়িক তখন যারা রাজনীতিতে ছিলেন, তারা কখনও ওনার মতো এতটা অবিচল ছিলেন না। তখন অনেকেই একটা সময় পাকিস্তানের পক্ষে, আবার পাকিস্তানের বিপক্ষে বলেছেন।’

কারাগার থেকে কারাগারে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। এর মধ্যে স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ব্রিটিশ আমলে সাত দিন কারাভোগ করেন। বাকি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন তিনি কারাভোগ করেন পাকিস্তান সরকারের আমলে।

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘সবচেয়ে মজার বিষয়, পাকিস্তান সৃষ্টি হলো ১৯৪৭ সালের আগস্টে, আর উনি ১৯৪৮ সালের মার্চে কারাগারে চলে গেলেন।’

দেশ স্বাধীনের পর পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডনে যান বঙ্গবন্ধু। সেখানে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। ছবি: মুজিব ১০০

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার এই শিক্ষক বলেন, এই ছয় -সাত মাসেই তিনি কিন্তু বুঝে ফেলেছিলেন, পাকিস্তানের এই কাঠামোতে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আসবে না। এই যে ওনার এই দূরদর্শিতা, তা তখন কারও মধ্যেই ছিল না।

পাকিস্তান আমলে তার কারাভোগের শুরুটা হয় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ধর্মঘট পালনকালে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভরত অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান কয়েকজন সহকর্মীসহ গ্রেপ্তার হন।

এমনকি ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন যখন ঢাকার টিকাটুলির এমকে দাস রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে নতুন একটি সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়, শেখ মুজিব তখন কারাগারে। তবু ওই নতুন সংগঠনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছিলেন তিনি।

মেয়ে শেখ হাসিনা ও নাতি সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: মুজিব ১০০

শেখ হাসিনা তার স্মৃতিচারণায় বর্ণনা দিয়েছেন, পিতা শেখ মুজিব কীভাবে বাড়িতে একটি স্যুটকেস গুছিয়ে রাখতেন যেকোনো মুহূর্তে কারাগারে যাওয়ার জন্যে। সেই স্যুটকেসে তার নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতেন স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

কারাগারে শেখ মুজিব যে নোটবই রাখতেন, যেটি পরবর্তীতে ‘কারাগারের রোজনামচা’ নামে ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে, সেটিতে তিনি লিখেছেন: ‘জেলে যারা যায় নাই, জেল যারা খাটে নাই– তারা জানে না জেল কি জিনিস। বাইরে থেকে মানুষের যে ধারণা জেল সম্বন্ধে, ভিতরে তার একদম উল্টা। জনসাধারণ মনে করে চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা, ভিতরে সমস্ত কয়েদি এক সাথে থাকে, তাহা নয়। জেলের ভিতর অনেক ছোট ছোট জেল আছে।’

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘ওই সময়টাতে এমন অনেক কিছু ছিল, যা তাকে সময়ের আগে নিয়ে গিয়েছে। পাকিস্তান যখন সৃষ্টি হলো, তখন কি কেউ চিন্তা করেছে এমন হবে। তখন সবার মধ্যেই এক চিন্তা যে, কীভাবে পাকিস্তান গড়ে তোলা যায়। তখন ওনার সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের চিন্তা ছিল কীভাবে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক রাখা যায়, অবস্থার উন্নতি করা যায়। কিন্তু উনি ছিলেন আলাদা।’

ছয় দফা ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা

১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। এটি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। এই ছয় দফা মুক্তিকামী বাঙালি জাতির জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির বীজ বুনে দেয়, পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের গোড়ায় আঘাত করে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু, তার স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও তাদের ছোট ছেলে শেখ রাসেল। ছবি: মুজিব ১০০ৃ

১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি আইয়ুব সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ মামলা করে। এটি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে বেশি পরিচিতি পায়।

দুটি ঘটনাকে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের মাইলফলক হিসেবে দেখেন বিশ্লেষকরা।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। ​টানা গণআন্দোলনের মুখে আইয়ুব সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানসহ এ মামলার সকল বন্দীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

জেল থেকে বেরিয়ে মুজিব স্বাধীন দেশ তৈরির লক্ষ্যে তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করে দিয়েছেন।

এ বিভাগের আরো খবর