সুকুক বন্ডের মাধ্যমে ২৫ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা বিদেশি বিনিয়োগ আনতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ দেশবন্ধু। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এ ধরনের বিনিয়োগ আনার উদ্যোগ বাংলাদেশে প্রথম।
সুকুক কী
সুকুক হলো বিশ্বজুড়ে চালু একটি শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড। এটা এক ধরনের বিনিয়োগ। কোনো ঋণ নয়। সুকুক একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ সিলমোহর লাগিয়ে কাউকে অধিকার ও দায়িত্ব দেয়ার আইনি দলিল। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পূর্বানুমতি লাগে না। শুধু ঋণের অনুমতি প্রয়োজন হয়।
যেভাবে আসবে সুকুক বন্ডের বিনিয়োগ
বাংলাদেশে এই সুকুক বন্ড বিনিয়োগের পথ খুলতে বিখ্যাত বেডফোড রো ক্যাপিটেল কোম্পানিকে লন্ডনভিত্তিক সুকুক স্টাকচারিং বিষয়ে আল ওয়াসিলা পিএলসি মেনডেট দিয়েছে। ওই সুকুকটি আবার ফ্রাঙ্কফুর্ট স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হবে। বেডফোড রো ক্যাপিটেলের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ব্লুমাউন্ট ক্যাপিটাল এক্ষেত্রে লিড ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে।
দেশবন্ধুর পরিচয়
বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত একটি শিল্প গ্রুপ দেশবন্ধু। তাদের চিনি, সিমেন্ট, খাদ্য-পানীয়, ভোজ্যতেল, টেক্সটাইল, পোশাক, পলিমার ও প্যাকেজিং, পাবলিকেশন্স, শিপিং, শপিংমল, আবাসন খাত, অটোরাইসমিল, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে। এসব ব্যবসায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ কর্মরত। গ্রুপটির শিল্প-কারখানা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিস্তৃত।
কী হবে সুকুক বন্ডের বিনিয়োগ দিয়ে
এই তহিবল থেকে স্থানীয় ব্যাংকের উচ্চ সুদের ঋণ পরিশোধ এবং নতুন কারখানা তৈরিতে বিনিয়োগ করা হবে। একই সঙ্গে বিদ্যমান ব্যবসার পরিধিও বাড়াতে এই বিনিয়োগ কাজে লাগানো হবে। যার ফলে উৎপাদন খরচ অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে। প্রস্তুতকৃত পণ্য দেশের বাজারে ও বিদেশে রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা মূল্যে বিক্রি করা যাবে।
কেন আগ্রহী সুকুক বন্ডে
এ প্রসঙ্গে দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রচলতি ধারণা থেকে বের হয়ে দেশবন্ধু গ্রুপ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বিনিয়োগ আনতে যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, বাংলাদেশে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো স্বল্প সময়ের জন্য এফডিআর নিয়ে কয়েক বছরের জন্য প্রকল্প ঋণ দিয়ে থাকে। যা একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ। কারণ বাংলাদেশ এখন আর একেবারেই ছোট অর্থনীতির দেশ নয়। একেকটি কারখানায় কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে হয়। ইকনোমিক স্কেলে ছোট কারখানাগুলো সারা বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না।
বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রসঙ্গে গোলাম মোস্তফা বলেন, দুর্বল অবকাঠামো ও সেবা খাতের ধীরগতির কারণে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত সুদ দিয়ে ঋণ নিয়ে কারখানাগুলো বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে, তা থেকে আয় করে, ব্যাংকে ফেরত দেয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। স্বল্প সময়ে ফেরত দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। এরই মধ্যে আবার নতুন সংযোজিত আন্তর্জাতিক ক্রেতা আরোপিত অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সসহ অন্যান্য কমপ্লায়েন্স সনদ দিতে প্রায় দুই বছর নিয়ে নেয়। এখানে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ শিল্প মালিক বা উদ্যোক্তা ব্যাংকের কর্মচারীর মতো কাজ করেই যাচ্ছেন। বাস্তবে যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা, সেভাবে এগোতে পারছে না। এসব বিবেচনা থেকেই সুকুক বন্ডের মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ আনার চেষ্টা করছে দেশবন্ধু।