কানাডা পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের সহযোগী ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের সাবেক ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান, ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাই ও সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরীকে ৭০ কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন দুদক পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।
গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করে তাদের পাঁচ দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার। সন্ধ্যায় ঢাকার ভারপ্রাপ্ত মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ রবিউল আলম পাঁচ দিনেরই অনুমতি দেন।
তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে ব্যাংকার পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। তিনি গত অক্টোবরে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশ ছেড়ে প্রথমে ভারত যান, পরে চলে যান কানাডা।
দুদক এর আগে পি কে হালদারের বেশ কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। তাদের ব্যাংক হিসাবে থাকা দেড় হাজার কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে।
দুদক পরিচালক বলেন, বিকেল ৪টার দিকে দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ারের নেতৃত্বে একটি দল তাদের গ্রেপ্তার করে গত জানুয়ারিতে করা এক মামলায়।
মামলায় বলা হয়, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পরের সহায়তায় প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির আশ্রয়ে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে তারা ভুয়া/অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান আনান কেমিক্যাল লি. এর নামে জাল রেকর্ডপত্রাদি তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটির মালিককে ভুয়া ঋণ পেতে সরাসরি সহযোগিতা করেন।
এভাবে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণের নামে আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পি কে হালদারসহ ২৪ জনকে আসামি করে ২৪ জানুয়ারি মামলাটি করা হয়।
নাহিদা রুনাইয়ের হিসাবে ৭০ কোটি টাকা
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাইয়ের ব্যাংক হিসাবে গত চার-পাঁচ বছরে ৭০ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া তার ২৮ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটির তদন্ত কমিটি।
দুদকের তদন্ত অনুযায়ী, পি কে হালদারের অর্থ পাচারের অন্যতম সহযোগী ও বান্ধবী হিসেবে পরিচিত নাহিদা রুনাই গত সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মিত অফিস করেছেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে।
পি কে হালদারের কমপক্ষে চারটি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। চট্টগ্রামের খুলশী থানার পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার জাকির হোসেন বাইলেনের স্থায়ী ঠিকানার বাসিন্দা নাহিদা রুনাই। তাদের বাড়িটি স্থানীয়ভাবে মোজাফ্ফর খানের বাড়ি হিসেবে পরিচিত। তার বাবা চট্টগ্রামে একটি সরকারি দপ্তরে ‘করণিক’ পদে চাকরি করতেন। রুনাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় এসে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিডেটে চাকরি পান। সেখানেই ২০০৯ সাল থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন পি কে হালদার।