বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

’৭৫ নিয়ে বক্তব্য: বিএনপির মিনুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

  •    
  • ১৬ মার্চ, ২০২১ ১৪:২৬

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ছাড়াও মামলায় আসামি করা হয়েছে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনকে।

শেখ হাসিনার পরিণতি ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের মতো হতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে বক্তব্য দেয়া বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুসসহ দলটির চার নেতার নামে রাজশাহীতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪-এ (আমলি আদালত বোয়ালিয়া) মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মামলাটি হয়।

এতে সাবেক সিটি মেয়র মিনু ছাড়াও আসামিরা করা হয়েছে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনকে।

মামলাটিতে বাদী করা হয়েছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোসাব্বিরুল ইসলামকে। তার আইনজীবী হিসেবে মামলার আবেদন আদালতে দাখিল করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসলাম সরকার।

এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ দলীয় অনেক নেতা-কর্মী।

মামলাটি গ্রহণ করে বিচারক সাইফুল ইসলাম মামলার বাদীর জবানবন্দিও নিয়েছেন।

মামলায় বলা হয়, ২ মার্চ রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের সঞ্চালনায় বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বিএনপির এই চার নেতা পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের অসৎ উদ্দেশ্যে নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে মিজানুর রহমান মিনু প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘হাসিনা রেডি হও, আজ সন্ধ্যার সময়, কালকে সকাল তোমার না-ও হতে পারে, মনে নাই পঁচাত্তর সাল? পঁচাত্তর সাল মনে নাই?’

মামলায় আরও বলা হয়, মিনুর এই ঘোষণার পর বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে উগ্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। দলটির কিছু নেতা-কর্মী সমাবেশের এই বক্তব্য ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করেন। সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ অন্যরাও একইভাবে বক্তব্য দিয়ে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করেন এবং বেআইনিভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকার উৎখাতের হুমকি দেন।

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাসহ নির্বাচিত সরকার উৎখাতের প্রকাশ্য ঘোষণা ও হুমকি দিয়ে তারা রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন, যা বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি বিপজ্জনক ও হুমকিস্বরূপ। তাই এই মামলা করা হলো।

মামলার আবেদন দাখিলে আদালতে উপস্থিত হন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী। ছবি: নিউজবাংলা

যা ঘটেছিল

২ মার্চ রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠের পাশে একটি কমিউনিটি সেন্টারের পাশে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মিজানুর রহমান মিনু যে বক্তব্য দেন তার একাংশে বলেন ‘আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, রাজপথে থেকে দেশনেত্রী হয়েছেন। তাকে বের করে আনব, মুক্তি চাই না হাসিনা... রেডি হও। “আজ সন্ধ্যার সময়, কালকে সকাল তোমার নাও হতে পারে। মনে নাই ’৭৫ সাল? ’৭৫ সাল মনে নাই?”’ সমাবেশে ১৫ আগস্ট ঘটানোর ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দেয়ায় ক্ষুব্ধ হন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। পরদিনই প্রতিবাদ জানিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ মিনুকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইতে বলে। ক্ষমা না চাইলে মামলা করার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ।

আলটিমেটামের সময় শেষ হওয়ার পর ৭ মার্চ মিজানুর রহমান মিনু গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়ে নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। মিনুর পক্ষে রাজশাহী নগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক নাজমুল হক ডিকেন ই-মেইলে বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠান।

বিবৃতিতে মিনু উল্লেখ করেন, ‘ভোট জালিয়াতির প্রতিবাদ, নতুন নির্বাচন কমিশন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্গঠনের দাবি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশে আসতে বাধা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ ছিল। আমার বক্তব্যের জন্য যারা ব্যথিত হয়েছেন, মর্মাহত হয়েছেন, আমি তাদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করছি।’

মিনু বলেন, ‘আমি এই মহানগরীতে জন্মগ্রহণ করে দীর্ঘদিন রাজশাহীবাসীকে নিয়ে রাজনৈতিক নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছি। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ সকল আন্দোলনে পাশে পেয়েছি। সুতরাং কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা গোষ্ঠীবিশেষকে উদ্দেশ করে আক্রোশমূলক বক্তব্য প্রদান করা আমার স্বভাববহির্ভূত। তাই সকলকে আমার বক্তব্যে ষড়যন্ত্র না খোঁজার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

তবে নির্ধারিত সময়ে ক্ষমা না চাওয়ায় এবং নগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদককে দিয়ে বিবৃতি পাঠিয়ে কেবল দুঃখ প্রকাশ করায় সন্তুষ্ট হয়নি মহানগর আওয়ামী লীগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৯ মার্চ মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন করা হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনটি জমা দেয়া হয়।

জেলা প্রশাসক মামলার আবেদনটি অনুমতির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ায় মঙ্গলবার আদালতে মামলার আবেদন করা হলে তা গ্রহণ করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর