এই প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে একটি প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য বাংলাদেশ অবকাঠোমো উন্নয়ন তহবিল বা বিআইডিএফ গঠন করা হয়েছে।
সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ তহবিলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথম পর্যায়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ড্রেজিং প্রকল্পে এ তহবিল থেকে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এ তহবিল থেকে বছরে ২০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ ১৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে তহবিলের আকার বাড়ানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রিজার্ভের টাকা পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষকে বিতরণ করা হবে। ঋণের সুদের হার হবে ২।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার মধ্যে দেশের রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে। এই রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে দেশের উন্নয়নে কীভাবে নিজেরা ব্যয় করতে পারি, সেটাই চিন্তা করছি।
‘বারবার অন্যের কাছে হাত পাতা, আর ধার না করে আমরা আমাদের নিজেদের অর্থ দিয়ে নিজেদের অবকাঠোমো উন্নয়ন করতে পারি। তাতে দেশেরও লাভ, আমাদেরও আত্মবিশ্বাস জন্মাবে।’
রাবনাবাদ ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এ বন্দরের দক্ষতা বাড়বে। ফলে এ অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিআইডিএফ গঠনের ফলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
করোনার মধ্যে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ রিজার্ভ মজুত থাকতে হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশ এখন নিরাপদ ও স্বস্তিতে আছে।
রিজার্ভের এই উল্লম্ফনে তা থেকে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগে চিন্তাভাবনা করে আসছে সরকার। গত বছরের জুলাই মাসে একনেক সভায় রিজার্ভের টাকা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তখন থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। এর পর কীভাবে বিনিয়োগ করা যায়, তা নিয়ে কাজ শুরু করে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিআইডিএফ গঠনের মাধ্যমে রিজার্ভের অর্থ ব্যবহার শুরু করল সরকার।
তবে রিজার্ভের অর্থ সতকর্তার সঙ্গে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, করোনার কারণে আমদানি কম ও রেমিট্যান্স বেশি আসায় রিজার্ভ স্ফীত হচ্ছে। কিন্তু আমদানি ব্যয় বাড়লে ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে তখন রিজার্ভ কমে যাবে। ঋণের মাত্রা বেশি হলে ঝুঁকি হতে পারে। ফলে এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে।