ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি এক দশক আগেই ‘সই হয়ে যাওয়ার’ যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন স্বীকার করেছেন যে, দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে চুক্তি হয়নি।
সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী দুই দিন আগের বক্তব্যের কারণে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন।
শনিবার মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিস্তা তো অলরেডি ১০ বছর আগে চুক্তি হয়ে গেছে। বাস্তবায়ন হয় নাই।… তিস্তা চুক্তি ১০ বছর আগে পাতায় পাতায় সই হয়েছে। ডকুমেন্টও উভয়পক্ষ… ভারত সরকার আমাদের বলেছে, আগে যে চুক্তি হয়েছে সেটা স্ট্যান্ডবাই। তারা এটা গ্রহণ করে এবং তার থেকে কোনো ব্যত্যয় হয় নাই। কী কারণে যে বাস্তবায়ন হয় নাই, আমরা তো সেটা জানি।’
মন্ত্রীর সেদিনের বক্তব্যে তৈরি হয় বিভ্রান্তি। কারণ, ২০১১ সালে ভারতের সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। দুই দেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তিতে আটকে গেছে সেই চুক্তি। এরপর চুক্তি নিয়ে দুই পক্ষে এক দশক ধরেই নানা আলোচনা চলছে। ভারতও বারবার আশ্বাস দিয়ে আসছে। ঢাকাও বিষয়টি নিয়ে সব সময় কথা বলে আসছে।
তাহলে মন্ত্রী কেন বললেন যে, চুক্তি হয়ে আছে?
জবাবে তিনি বলেন, ‘তিস্তা চুক্তি মোটামুটি ফাইনাল স্টেজে ছিল। এবং তখন যারা উপস্থিত ছিলেন তারা আমাদের জানিয়েছেন প্রতিটি পেইজে ইনিশিয়াল করা আছে। সচিব পর্যায়ে। সুতরাং এই তিস্তা চুক্তির প্রতিটি পেইজে পেইজে সচিব পর্যায়ে সই করা আছে। কিন্তু চুক্তিটি কী কারণে হয়নি আপনারা জানেন সেটি। ভারত সরকার বারবার আমাদের অঙ্গীকার করেছেন, দে স্ট্যান্ড বাই এই চুক্তি। তাদের সেখান থেকে কোনো ব্যত্যয় হয়নি। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মিটিংয়ের সময়ও এটা তুলেছেন।’
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সরকার পর্যায়ে যখনই কোনো আলোচনা হয়, তখনই এই বিষয়টি সামনে আসে। এর কারণ, গত এক দশকে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত বেশ কিছু সমস্যার সমাধান হলেও তিস্তা নিয়ে অগ্রগতি না হওয়ায় বাংলাদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে।
প্রসঙ্গটি আবার সামনে এসেছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর ঘিরে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ঢাকায় যে আয়োজন করা হয়েছে, তাতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান মোদিকেও।
তিনি ঢাকায় এলে দুই সরকারপ্রধান একান্তে বৈঠক করবেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও আলোচনা হবে নানা বিষয় নিয়ে। বেশ কিছু সমঝোতার খসড়াও তৈরি করা হয়েছে।
তবে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি এবারও হচ্ছে না, এটা নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই। তবে বলেছেন, আলোচনায় তারা প্রসঙ্গটি আবার তুলবেন।
ভবিষ্যতে চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক দিনই আশা করি। ভারতের সঙ্গে যখনই আমাদের কোনো মিটিং হয়, এই ইস্যুটা আমরা তুলি। এবং সব সময় তোলা হয়। শুধু তিস্তা নয়, বাকি যে আমাদের ছয়টি নদী, এই মুহূর্তে আগামীকালকে (১৬ মার্চ) নয়াদিল্লিতে সচিব পর্যায়ে নদী সম্পর্কিত আলোচনা হবে।’