বাবা-মাকে হত্যায় মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে ঐশী রহমানকে হাইকোর্টের দেয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন নাকচ করেছে আপিল বিভাগ।
তবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে ঐশীর করা আপিলের অনুমতি দিয়েছে আদালত।
সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। ঐশীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফয়সল এইচ খান।
আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, ‘ঐশী রহমানকে বিচারিক আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দেয় হাইকোর্ট। এরপর তার সাজা বাড়াতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপিল করা হলে আপিল বিভাগ সে আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে।
‘সেই সঙ্গে ঐশীর লিভ টু আপিলের অনুমতি দিয়েছেন। অর্থাৎ, এখন তার যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল থাকবে কি থাকবে না সেটির ওপর আপিল শুনানি হবে।’
২০১৭ সালের ৫ জুন ঐশীর ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ে বিচারিক আদালতের দেয়া সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ডের আদেশ দেয় হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে জরিমানা ২০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা করা হয়।
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজ বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন ঐশী গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন।
এ ঘটনায় করা মামলায় ২০১৪ সালের ৯ মার্চ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ইন্সপেক্টর আবুল খায়ের মাতুব্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ঐশী রহমান এবং তার দুই বন্ধু মিজানুর রহমান রনি, আসাদুজ্জামান জনিসহ চারজনকে আসামি করে দুটি অভিযোগপত্র দেন।
অন্য আসামি গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার মামলার বিচার হয় শিশু আদালতে। সেখানে সুমি খালাস পায়।
এ হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর নিহতদের একমাত্র মেয়ে ঐশীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয় ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদের আদালত। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।
মামলার অন্য আসামি মিজানুরকে খুনের ঘটনার পর ঐশীদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে দুই বছর কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাস কারাদণ্ড দেয়া হয়। ঐশীর অন্য বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি খালাস পান।
দুটি খুনের জন্য পৃথক দুটি অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। দুই অপরাধের জন্য আলাদা করে ঐশীকে দুইবার ফাঁসি ও দুইবারে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
রায়ের সাত দিন পর ২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছে। পরে এ মামলায় শুনানির জন্য রায়ের বিরুদ্ধে ঐশী রহমানের করা আপিল গ্রহণ করে শুনানি হয়। শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৫ জুন যাবজ্জীবন সাজার রায় দেয় হাইকোর্ট।
পরে রাষ্ট্রপক্ষ ও ঐশী আলাদাভাবে আপিল বিভাগে আবেদন করে।