স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনে ঢাকায় আসছেন না তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
যদিও ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত মুস্তফা ওসমান তুরান এর আগে জানিয়েছিলেন, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসতে যাচ্ছেন তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিফ অফ প্রটোকল কর্মকর্তা এম আমানুল হক নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন এই বিষয়টি। তবে কী কারণে আসছেন না, সেটি জানাতে পারেননি তিনি।
তবে এরদোয়ান এবার আসতে না পারলেও পরে সুবিধাজনক সময়ে তিনি আসবেন বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি ইদানীং বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। করোনাকালে বাংলাদেশকে চিকিৎসা উপকরণ উপহার দেয়ার পাশাপাশি ডিসেম্বরের শেষে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলবুৎ সাবুসুলুও সফর করে গেছেন।
ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন ইস্যুতে ধর্মভিত্তিক দলগুলো যখন উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছিল, তখন তুরস্কের একটি ঘোষণা আসে। তুর্কি সরকার সে সময় জানায়, তাদের অর্থায়নে আঙ্কারায় বঙ্গবন্ধুর এবং ঢাকায় আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্য বসবে। দেশে গৃহহীনদের ঘর করে দেয়ার একটি প্রস্তাবও দিয়েছে দেশটির সরকার।
এর মধ্যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বা মুজিববর্ষের উদযাপনে এরদোয়ানকে আমন্ত্রণ জানানো হলে দেশটির পক্ষ থেকে একাধিকবার জানানো হয়, যেকোনো একটি আয়োজনে আসবেন তুর্কি রাষ্ট্রপ্রধান।
দুই সপ্তাহেরও কম সময় বাকি থাকতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা সাজানো হচ্ছে। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০ দিনের বিশেষ আয়োজন এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরও চূড়ান্ত হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারী ও মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ আসছেন উদযাপনে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, জাপানের প্রধানমন্ত্রী, চায়নিজ প্রেসিডেন্ট, ইউনেস্কোর মহাপরিচালক, পোপসহ অনেকেই ভিডিও বার্তা পাঠাবেন।
তবে এরদোয়ান আসছেন কি আসছেন না, এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এতদিন কিছু জানানো হয়নি।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর গণভবন থেকে ভার্চুয়াল কনফারেন্সে তুরস্কের আঙ্কারায় নবনির্মিত বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এরদোয়ানকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন আনুষ্ঠানিকভাবে এই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন। এতে মুজিববর্ষে আসতে না পারলেও ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীতে তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধানকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করা হয়।
ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ সফরে আসা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। দুজনই নিশ্চিত করেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বা মুজিব শতবর্ষের যেকোনো একটি আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন এরদোয়ান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিফ অফ প্রটোকল এম আমানুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি (এরদোয়ান) এখন আসছেন না।’
এরদোয়ান কোনো ভিডিও বার্তা পাঠাবেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘উনি এখন ভিডিও মেসেজও দিচ্ছেন না, পরবর্তীতে বাংলাদেশ সফর করবেন বলে তিনি আমাদের জানিয়েছেন।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পাঁচ দশক পূর্তি আয়োজনে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান আশরাফ ঘানিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সাড়া পায়নি বাংলাদেশ। পাকিস্তান ও মিয়ানমারকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আফগানিস্তানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তারা এখনও আমাদের কিছু জানাননি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ‘মিয়ানমারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি’ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের রাষ্ট্রদূত থাকবেন।’
কেন দাওয়াত দেয়া হয়নি- এমন প্রশ্নে হালকা চালের রসিকতায় বললেন, ‘কাকে দাওয়াত দেব সেটাই তো সমস্যা।’ এসময় উচ্চস্বরে হেসে উঠেন মন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পরিকল্পনায় আগামী ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনের বিশেষ আয়োজন থাকছে। এর মধ্যে পাঁচ দিনের আয়োজন থাকছে ভার্চুয়ালি। আর পাঁচ দিন অতিথিদের উপস্থিতি থাকবে।
পাঁচটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা এই আয়োজনে বক্তব্য রাখবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু-বাপু (ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধি) ডিজিটাল প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করবেন।