চিকিৎসা সেবা নেয়ার সুবিধার্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড আরও ছয় মাস স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
সচিবালয়ে সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা গ্রহণের সুবিধার্থে তার ভাইয়ের আবেদন অনুযায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে ৪০১ এর ১ ধারায় দণ্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন।’
মন্ত্রী জানান, দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। শর্ত দুটি হলো খালেদা জিয়া বাসায় থাকবেন। তিনি সব ধরনের চিকিৎসা নিতে পারবেন। তবে খালেদা বিদেশে যেতে পারবেন না।
তিনি বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) ভাই শামীম ইস্কান্দার আমাদের এখানে এসে একটি আবেদন করেছিলেন সময় বৃদ্ধির জন্য। প্রধানমন্ত্রী সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধি করে দিয়েছেন আরও ছয় মাস।’
কামাল বলেন, ২৫ মার্চ থেকে এই আদেশ কার্যকর হবে।
তবে চিকিৎসা সেবা নিতে যেকোনো হাসপাতালে তিনি যেতে পারবেন বলে জানান মন্ত্রী।
‘ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা সেবা নেবেন। জরুরি প্রয়োজনে যেকোনো হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন। চেক করতে হলেও তিনি যেকোনো হাসপাতালে যেতে পারবেন। তবে কোনোভাবেই দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।’
সচিবালয়ে সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ছবি: নিউজবাংলা
বিদেশ থেকে চিকিৎসক আসতে পারবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এইগুলো নিয়ে আলোচনা হয়নি আমাদের। উনি তেমন কোনো আবেদন করেননি।’
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, নিজ বাসস্থানে অবস্থানকালে নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন
এর আগে দুর্নীতির দুই মামলায় সাজা পাওয়া খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সোমবারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে করা আবেদন এবং আইন ও বিচার বিভাগের আইনগত মতামতের আলোকে তার দণ্ডাদেশ শর্তসাপেক্ষে স্থগিত করা হয়েছে। ২৫ মার্চ থেকে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত থাকবে।
এর আগে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর সুপারিশ করে মতামত দিয়েছিল আইন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আগের শর্তগুলো মেনে চলতে হবে খালেদা জিয়াকে।
চলতি মাসের শুরুতে এ সম্পর্কিত নথি অনুমোদন দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এরপর নথিটি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘আমি মতামত দিয়েছি। ছয় মাস আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে উনার স্থগিতাদেশ। পূর্বের যে শর্ত ছিল, সেই শর্তানুযায়ী।’
৩ মার্চ খালেদা জিয়ার পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনপত্রে সই আছে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দরের।
আবেদনে খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো ও তাকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চাওয়া হয়। এটি ছিল বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে তার পরিবারের তৃতীয় দফা আবেদন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার। এই মামলায় বন্দি থাকাকালেই তার বিরুদ্ধে হয় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা। এ মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড পান বিএনপি নেত্রী। আগের মামলায় হাইকোর্টে আপিল করার পর সাজা হয় দ্বিগুণ। ফলে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার।
২০২০ সালের মার্চের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য স্থগিত হয় খালেদা জিয়ার দণ্ড। এরপর গত বছরের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। ছয় মাস শেষ হওয়ার আগেই মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়।
সাময়িক মুক্তির পর এখন খালেদা জিয়া গুলশানে তার বাসভবন ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন। তার মুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৫ মার্চ।