রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের গার্ডার লঞ্চার ধসে আহত এক চীনা কর্মীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (মেডিক্যাল সার্ভিসেস) আরিফ মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই ব্যক্তিকে (চীনা নাগরিক) এখন আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে। মাথার হাড়ও ভেঙে গেছে।’
এ ছাড়া আহত বাংলাদেশি এক কর্মীরও ছোটখাটো একটা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানান তিনি। বাকিদের অবস্থা অনেকটা ভালো।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের বিপরীত পাশে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের গার্ডার লঞ্চার ধসে পড়ে। এতে তিন চীনা কর্মীসহ ছয়জন আহত হয়েছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের ৯ ও ১০ নম্বর পিলারের মাঝে একটা স্প্যান বসানোর সময় হঠাৎ গার্ডার লঞ্চারটি ভেঙে পড়ে। তবে ঠিক কী কারণে এমনটি ঘটল সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।
যানজট থেকে সড়ক ব্যবহারকারীদের মুক্তি দিতে বিআরটি প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কে বাসের জন্য বিশেষায়িত এই লেন তৈরি করছে সরকার। যেটা হবে দেশের প্রথম বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি করিডোর। করিডোরে বাসের লেন হবে দুটি। একটি দিয়ে বাস আসবে, অন্যটি দিয়ে যাবে।
বিআরটি লেন শুরু হয়েছে ঢাকা বিমানবন্দর গোলচত্বর থেকে। শেষ হবে গাজীপুরের শিববাড়িতে।
আজ দুর্ঘটনার পরপরই সেখানে হাজির হন ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মো. শফিকুল ইসলাম। উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, এই প্রকল্পের বিমানবন্দর অংশে দুটি স্প্যান বসানো হয়েছে। তিন নম্বর স্প্যান বসানোর জন্য লঞ্চিং গার্ডার স্থাপনের সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
শুরুতে শফিকুল ইসলাম জানান, এতে চারজন আহত হয়েছেন। তবে বিকেল নাগাদ তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, আহতের সংখ্যা ছয়। যার মধ্যে চীনা নাগরিক তিনজন। বাকি তিনজন বাংলাদেশি কর্মী। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে সবার চিকিৎসা চলছে।
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এটা বলা যাচ্ছে না। এ জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
কথা হয় ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিআরটি প্রকল্পের এক কর্মীর সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, নয় ও দশ নম্বর পিলারের মাঝে স্প্যান বসানোর সময় গার্ডারের অবস্থান ঠিক মনে হয়নি। মনে হচ্ছিল গার্ডারটি একটু ঝুঁকে আছে।
এ দুর্ঘটনার আগের রাতে আবদুল্লাপুরে পলওয়েল কনভেনশন সেন্টারের কাছে প্রকল্পের একটা পিলারের বর্ধিত অংশ (উইং) ধসে পড়ার ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, উইংটি সদ্য ঢালাই দেয়া হয়েছিল। নিচের অংশে সাপোর্ট বিম কোনো কারণে সরে যাওয়ায় এমনটি ঘটেছে।
সরকারের তিনটি সংস্থা মিলে বাস্তবায়ন করছে বিআরটি প্রকল্প। অ্যাট গ্রেড বা মাটির সমান্তরালে বিআরটি লেন নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। ফ্লাইওভার, টঙ্গী সেতু আর উড়াল লেন নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। আর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন আর বাসের ডিপো নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
বিআরটি লেনে চলবে সরকারি কোম্পানির বাস। লেনটি চালু হলে প্রাথমিকভাবে নামানো হবে ৫০টি বাস। ২৫টি স্টেশনে যাত্রীরা উঠতে-নামতে পারবেন। কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, করিডোরটি দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন।
বিআরটি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালে। তবে কাজ শুরুই হয় এর এক বছর পর। এরপর থেকে ঢিমেতালে চলছে নির্মাণকাজ। রাস্তার ওপর ফেলে রাখা নির্মাণসামগ্রী, সংকুচিত হয়ে যাওয়া সড়ক আর নির্মাণযজ্ঞে শুরু থেকেই ভুগছেন গাজীপুর-বিমানবন্দর মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা। আগে থেকেই তীব্র যানজট ছিল এই মহাসড়কে। তবে বিআরটির নির্মাণকাজ এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে।