বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কাদের মির্জা: মামলা নিল না আদালতও, নিহতের মায়ের বিলাপ

  •    
  • ১৪ মার্চ, ২০২১ ২০:০১

‘এখন আগামী ১৫টা দিন আমি কোথায় কার কাছে থাকব? কে আমাকে নিরাপত্তা দেবে? রাষ্ট্র নাকি আদালত আমাকে নিরাপত্তা দেবে, আমি জানতে চাই। অন্তত দুইটা দিনের মধ্যে এ বিষয়ে আদালত একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলে আমরা স্বস্তি পেতাম।’

নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা কোম্পানিগঞ্জ থানার পর ফিরিয়ে দিল আদালতও।

গোলাগুলিতে এক শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারটির পক্ষ থেকে করা আবেদন গ্রহণ না করলেও মামলা বা অন্য কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না সে বিষয়টি কোম্পানিগঞ্জ থানাকে ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে বলেছে আদালত।

বিচারকের এই আদেশের পর মুষড়ে পড়েছে পরিবারটি। নিহত আলাউদ্দিনের মা মরিয়মেন্নেছা আদালত থেকে বের হয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

গত মঙ্গলবার রাতে বসুরহাট পৌরসভা চত্বরে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে শ্রমিক লীগ নেতা মো. আলাউদ্দিন নিহত হন।

আলাউদ্দিনের পরিবার বৃহস্পতিবার বিকেলে কোম্পানিগঞ্জ থানায় যায় মামলা করতে। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাইয়ের বিরুদ্ধে এই মামলা না নিয়ে থানা থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয় তাদের।

তিন দিন পর রোববার নোয়াখালীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের ৪ নম্বর আমলি আদালতে মামলার আবেদন করেন নিহত আলাউদ্দিনের ছোট ভাই মো. এমদাদ হোসেন রাজু।

এতে কাদের মির্জা, তার ছেলে মির্জা মাশরুর, ভাই শাহদাত হোসেনসহ ১৬৪ জনকে আসামি করার আর্জি জানানো হয়।

আদালত মামলা না নেয়ায় আদালত প্রাঙ্গণেই মুষড়ে পড়েন নিহত আলাউদ্দিনের মা মরিয়মেন্নেছা। ছবি: নিউজবাংলা

বিচারক এসএম মোসলেহ উদ্দিন মিজানের এজলাসে বিকেল ৩টার দিকে হয় শুনানি। বিচারক কোম্পানীগঞ্জ থানার কাছে জানতে চান, এই ঘটনায় কোনো মামলা বা আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর জাহেদুল হক রনিকে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে এ বিষয়ে।

আদালতের আদেশে হতাশা প্রকাশ করেছেন মামলার আবেদন নিয়ে যাওয়া এমদাদ হোসেন রাজু। তিনি বলেন, ‘আদালত যে ১৫টা দিন সময় দিল, আমি দ্বারে দ্বারে ঘুরতেছি। থানায় গেলাম, থানায় মামলা না নিয়া আমাকে ঘুরাইল। গত ছয়টা দিন আমিসহ আমার গোটা ফ্যামিলি কী দুর্বিষহ অবস্থায় আছি, এইটা শুধু আমরা জানি। তারা প্রতি মুহূর্তে আমাকে হত্যার চেষ্টা করছে। আমার পেছনে লোক লাগিয়ে রেখেছে। মোবাইলে আমাকে নানাভাবে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আজকেও পথে পথে অনেক বাধা অতিক্রম করে আমাকে আদালতে আসতে হয়েছে।

‘এখন আগামী ১৫টা দিন আমি কোথায় কার কাছে থাকব? কে আমাকে নিরাপত্তা দেবে? রাষ্ট্র নাকি আদালত আমাকে নিরাপত্তা দেবে, আমি জানতে চাই। অন্তত দুইটা দিনের মধ্যে এ বিষয়ে আদালত একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলে আমরা স্বস্তি পেতাম।’

তিনি বলেন, ‘আমার ভাই মারা গেল আমার ভাবী তার স্বামীকে হারাল, মা তার সন্তানকে হারাল, ভাতিজা-ভাতিজিরা তাদের বাবাকে হারাল, আমার পাশে থেকে তাদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার কথা। কিন্তু আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’

তবে বাদীর আইনজীবী হারুনুর রশীদ হাওলাদার বলেন, ‘আদালত মামলা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি বাদীর জাতীয় পরিচয়পত্র উপস্থাপন করতে বলেছে।’

মঙ্গলবার বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌর ভবন এলাকায় মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীদের মধ্যে সংষর্ঘ হয়। এতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসিসহ আহত হন অন্তত ২৫ জন।

বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদের মির্জা। ছবি: নিউজবাংলা

সংঘর্ষের কয়েক ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীরা উপজেলা পরিষদ এলাকা থেকে পৌরভবনের দিকে এগিয়ে যান। পরে সেখানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় মিজানুর রহমানের অনুসারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ও শ্রমিক লীগের চর ফকিরা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি (সাবেক যুবলীগ কর্মী) মো. আলাউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন আরও অন্তত ১৩ জন।

এই ঘটনার পর নিহত আলাউদ্দিনের ছোট ভাই এমদাদ হোসেন বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে দুই দফায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু মামলা নেয়নি থানা পুলিশ।

পরে এমদাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি এজাহার থেকে আবদুল কাদের মির্জার নাম বাদ দেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু এতে রাজি হননি তিনি। এ কারণে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করছেন।’

বসুরহাট পৌরসভার নির্বাচনের আগে দলের নেতাদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন কাদের মির্জা। শুরুতে কারও নাম উল্লেখ না করলেও পরে মির্জা কাদের জানান, তার এসব বক্তব্য নোয়াখালী আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে।

পরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে এমপি নিজাম ও একরাম চৌধুরীর সঙ্গে কাদের মির্জার বিরোধ। এসবের মধ্যে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলার চাপরাশিরহাট বাজারে সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল ও মির্জা গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন স্থানীয় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির।

সাংবাদিক হত্যা ও দলের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে ২৪ জানুয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ।

এ বিভাগের আরো খবর